ডেল্টা লাইফে প্রশাসক প্রত্যাহার, নতুন পর্ষদ গঠন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স থেকে প্রশাসক প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। আগামী বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

ডেল্টা লাইফে বড় রকমের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংস্থাটির সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে গত দেড় বছরে ৩ দফায় প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে প্রশাসক হিসাবে দায়িত্বে আছেন আইডিআরএ-এর সাবেক সদস্য কুদ্দুস খান।

কোম্পানিটির তৎকালীন পর্ষদের অভিযোগ, আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের প্রতিহিংসার শিকার কোম্পানিটি। ব্যক্তিগত স্বার্থে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি পর্ষদ বাতিল করেছেন বলে তাদের দাবি।

সম্প্রতি ড. মোশাররফের বিদায়ের পর আইডিআরএ নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার বাতিল পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২৪ জুলাই আইডিআরএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সমাঝোতার মধ্য দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে আইডিআরএ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনসহ কোম্পানি পরিচালনায় ১০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় চলমান মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।

নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন হাফিজ আহমেদ মজুমদার, আর ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. জুনায়েদ শফিক। পর্ষদের সদস্য (পরিচালক) হিসেবে আছেন বাতিলকৃত পর্ষদের সদস্য সুরাইয়া রহমান, পরিচালক আদিবা রহমান (কোম্পানিটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা), বাতিলকৃত পর্ষদের সদস্য পরিচালক জেয়াদ রহমান, পরিচালক সাকিব আজিজ চৌধুরী, পরিচালক চাকলাদার রেজানুল আলম এবং পরিচালক সাকিব আজাদ।

উল্লেখ্য, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগের পর দফায় দফায় নিরীক্ষক নিয়োগ করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে একেক সময় একেক ধরনের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও তোলা হয়। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে দেওয়া এক চিঠিতে আইডিআরএ জানায়, কোম্পানিটির ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে আইডিআরএ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ঘুস চাওয়ার অভিযোগ তোলে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ। ঘুস চাওয়ার ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরবর্তী সময়ে আর্থিক অনিয়ম, ঘুস-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে ১৪ জুন পদত্যাগ করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন। এরপর নতুন চেয়ারম্যান হন মোহাম্মদ জয়নুল বারী।

জানা যায়, ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের পর গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ করে আইডিআরএ। এর আগে দুটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেসার্স হাওলাদার ইউনুস তাদের রিপোর্টে ২২টি এবং মেসার্স ফেমস অ্যান্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ২৫টি অনিয়ম চিহ্নিত করে। আর প্রশাসক নিয়োগের পর কোম্পানিটিতে ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য বিস্তারিত অডিট পরিচালনার লক্ষ্যে আজিজ হালিম চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস নামের দুটি অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত আজিজ হালিম চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস সুনির্দিষ্ট পাঁচটি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত অডিট রিপোর্ট এবং একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ২৯টি আর্থিক অনিয়ম, বোর্ড গঠনে অনিয়ম, এজিএম সংক্রান্ত অনিয়ম এবং সেন্ট্রাল ডেটাবেজ থেকে ডেটা ডিলিটসহ একটি আংশিক রিপোর্ট প্রদান করেছে।

অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে মঞ্জুরুর রহমান এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ৬৩৮ কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে।

এদিকে আইনী জটিলতার কারণে গত তিন বছর বার্ষিক সাধারণ সভা করতে পারেনি কোম্পানিটি। শেয়ারহোল্ডারদেরকেও দেয়নি কোনো লভ্যাংশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ২৬ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.