লোডশেডিং বন্ধের দাবি

মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকানপাট দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বৃহত্তর স্বার্থে লোডশেডিং বন্ধের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর মগবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।

হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে রাত ৮টার মধ্যে দোকান পাট বন্ধ করা এবং দৈনিক এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং, দেশের ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ব্যবসাবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।

তিনি জানান, গত ২০ জুন থেকে মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকানগুলো রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হচ্ছে। বর্তমানে মাগরিবের নামাজ শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। রাত ৮টায় দোকান পাট বন্ধের কারণে প্রায় ৬০-৭০ ভাগ দোকানে বেচাকেনাই শুরু হয় না। কিন্তু দোকান মালিকদের কর্মচারী খরচ, বিদ্যুৎ বিল ও দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বহন করতে হচ্ছে। এতে চরম অর্থ সংকটে পড়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

হেলাল উদ্দিন বলেন, জ্বালানি তেলে পরিচালিত বিদৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখলে এক দিনে জ্বালানি সাশ্রয় হয় ৯ কোটি ২০ লাখ টাকার। কিন্তু একদিন দোকানপাট বন্ধ রাখলে ক্ষতি হয় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে রাত ৯টার পরিবর্তে রাত ৮টায় দোকান বন্ধ রাখলে অর্থাৎ এই এক ঘণ্টায় ক্ষতি হয় ১৬০ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। কারণ মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকানগুলোতে বেচাকেনা শুরু হয় মূলত সন্ধ্যার পর।

দোকান মালিকদের এ নেতা জানান, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী কয়েকদিন আগে জানিয়েছেন আমদানি করা জ্বালানির (ডিজেল ও এলএনজি) মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুতের কোনো সংকট নেই, সংকট জ্বালানিতে। বাকি ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় পরিবহন ও কৃষি খাতে। মাত্র ১০ শতাংশ সাশ্রয়ের জন্য সমালোচকদের সমালোচনা করার সুযোগ দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এই লোডশেডিংয়ে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং এতে করে ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। শুধু এক-দুই ঘণ্টা অপরিকল্পিত লোডশেডিং কর্মসূচির কারণে পুরো অর্জনকেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে।

তিনি বলেন, লোডশেডিং না দিয়ে ডিজেল ও এলএনজি দাম সমন্বয় করার পরামর্শ দিয়ে দোকান মালিকদের এ নেতা বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ালে সরকারের ভর্তুকি কমবে। মানুষ সাশ্রয়ী হবে।

এই মুহূর্তে লোডশেডিং থেকে সরে এসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক লিটার ডিজেলের দাম ১০৬ রুপি, আমাদের দেশে ৭৮ টাকা। সুতরাং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় না হলে জ্বালানি তেল প্রতিবেশী দেশে পাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দোকান মালিকদের পক্ষ থেকে চারটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো-

লোডশেডিং বন্ধ করা, মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকানপাট দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা, অফিস টাইম সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত করা।

সংগঠনটি মনে করে, এসব উদ্যোগ নিলে যানজট কমে আসবে, কর্মঘণ্টা বাড়বে, জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম মহানগরের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালামত আলীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় দোকান মালিক সমিতির নেতারা।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.