‘পদ্মা সেতুর সুফল পেতে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন’

পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার। এই সেতুর ফলে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হতে শুরু করেছে। তবে এই সেতুর পূর্ণ সুফল পেতে হলে প্রয়োজন হবে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এই বিনিয়োগের যোগান দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এ কথা বলেছেন।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই)  “পদ্মা সেতু পুঁজিবাজারের জন্য একটি সুযোগ” (Padma Bridge and Opportunities for Bangladesh Capital Market) শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের অন্যতম শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রীন ডেল্টা ক্যাপিটাল লিমিটেড রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম।

গ্রীনডেল্টা ক্যাপিটালারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নাসির আহমেদ চৌধুরী।

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর,  ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া।

অনুষ্ঠানে দেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থার প্রসঙ্গে ড. মশিউর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই নেতৃত্বই আমাদেরকে আগামীতে আর্থনৈতিক দিক এবং সামাজিক দিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি অসম্ভব। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের পর যে পদক্ষেপটি এখন নিতে হবে, তা হলো আরও বিনিয়োগের জন্য অর্থ জোগাড় করা। এই বিনিয়োগ প্রাইভেট সেক্টর থেকে আসা উচিত। এখানে পাবলিক সেক্টরের ভূমিকা রয়েছে। তা হলো অবকাঠামোগত সহায়তা দেয়া। রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক প্রদান করা। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাইভেট সেক্টর এই সুযোগগুলো গ্রহণ করে বিনিয়োগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে না।

দেশের বন্ড মার্কেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, বন্ড মার্কেট আরও বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে ,বন্ড মার্কেটের ওপরে আমাদের আলোচনা বলে দেয় অনেক রিসোর্সেস আছে এটাকে মবিলাইজ করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্রাউড ফান্ডিংয়ের কথা বলেছি। এর অর্থ হলো অনেক মানুষ মিলে ছোট ছোট অঙ্কের অর্থ জোগান দেয়া। ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প মূলধন নিয়ে শুরু করে, কিন্তু ওই টাকা পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বড় হয়ে উঠছে। এই টাকা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের আরো সম্প্রসারণ করে। কিন্তু এসব অর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল উৎপাদন, কৃষি ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ হয় না।’

ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘এই ক্রাউড ফান্ড মবিলাইজ করার একটা বড় সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে ইনফরমাল সেক্টরকে ফরমাল সেক্টরে রূপান্তরিত করা যাবে। ফরমাল সেক্টর বিস্তৃত করা গেলে রেভিনিউ আদায় বেড়ে যাবে সরকারের। অর্থনীতিতে উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন এখন সত্যি হয়েছে। পদ্মাসেতু দেশের দক্ষিনাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সংগে সংযোগের পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়িক অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখছে। তেমনি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে পুঁজিবাজারেও। আমি বিশ্বাস করি দেশের পুঁজিবাজার যেকোনো আধুনিক অর্থনীতির সাথে সামজস্যপূর্ন।
তিনি বলেন, অর্থ বাজার এবং পুঁজিবাজার অর্থনীতির অপরিহার্য অংশ। কিন্তু বাংলাদেশে বন্ড মার্কেটের কার্যকলাপ সীমিত, কিন্তু এই বন্ড মার্কেটও এখন বড় হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা প্রথম কাতারে। দেশের শিল্পায়নের জন্য এ বাজারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

এসময় সম্মানিত অতিথির (গেস্ট অব অনার) বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজার নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই মূলধন সরবরাহের উৎস হয়ে উঠতে পারে।

তিনি বলেন, পদ্মা ব্রিজ হয়ে গেছে। এখনই সময় এটি ব্যবহার করে এর সুবিধাগুলো গ্রহণ করা। এখন আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু ক্যাপিটাল মার্কেট বা মানি মার্কেট নয়, আমাদের অর্থনীতির সব অংশীদারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পদ্মার ওই পারে যে জনগোষ্ঠী, তা আমাদের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ প্রায়। যেটি এত দিন সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগের বাইরে ছিল। এখন পদ্মা সেতুর কারণে রাজধানীর সঙ্গে ওই অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হওয়ার ফলে অনেক কিছুই ঘটছে।

এছাড়াও পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এর জন্য কর্মসংস্থান ও অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থের জোগান পুঁজিবাজার থেকে হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মূল  প্রবন্ধে গ্রীনডেল্টা ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের অবকাঠামো খাতে বছরে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়ো প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে বিনিয়োগ হচ্ছে ২ ধেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগের এই গ্যাপ কমাতে  পুঁজিবাজারকে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার ছেড়ে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের নিবিড় যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এতে ধীরে ধীরে প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে। কৃষি, মৎস্য, ম্যানুফেকচারিং শিল্প, পর্যটন ইত্যাদি খাতের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে দেশের অনেক বড় বড় শিল্প গ্রুপ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় জমি কিনেছে। এখানে বিনিয়োগের যে বিপুল াহিদা তৈরি হয়েছে, তা শেয়ার, বন্ড, সুকুক ইত্যাদি ইস্যুর মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব।

অনুষ্ঠানের শেষে ভোট অব থ্যাংকস প্রদান করেন গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.