‘পদ্মা সেতু আত্মপ্রত্যয়, আত্মমর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক’

পদ্মা সেতু কেবল দুই পাড়কে এক করার সেতু নয়, এটা দেশের মানুষের আত্মপ্রত্যয় ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। সেইসঙ্গে এটি দেশের গৌরবেরও প্রতীক। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ‘আমাদের অর্থে আমাদের পদ্মা সেতু’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও অধ্যাপক শামসুল হক।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইটির প্রকাশক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খন্দকার।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পাদিত ও চন্দ্রাবতী একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বইটিতে শিক্ষাবিদ, সংবাদকর্মী, প্রকৌশলী বিশেষজ্ঞ ও নির্মাণসংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট লেখকদের ৬৭টি লেখা, গুরুত্বপূর্ণ ছবি, তথ্য-উপাত্ত স্থান পেয়েছে। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা ও মূল রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী ও নামও ঠিক করে দিয়েছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, কোনো বিদেশি চাপের কাছে মাথা নত না করে দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে প্রধানমন্ত্রী যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে পদ্মা সেতু করার আত্মপ্রত্যয় দেখিয়েছেন তা আমাদের অনেকেরই অজানা। আজকের অনুষ্ঠানের বক্তাদের আলোচনায় সেসব বিষয় উঠে এসেছে।

পদ্মা সেতুর নির্মাণের পেছনের গল্পগুলো সবারই জানা উচিত। কী কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়েছেন, এগুলো জানতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে অগাধ ভালোবাসা তাই প্রধানমন্ত্রীকে শক্তি যুগিয়েছেন। যার ফলে সব ধরনের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সাহসিকতার সাথে তিনি পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করেছেন, যা দেশের গৌরবের প্রতীক।

প্রধানমন্ত্রীর এই দুঃসাহসী পদক্ষেপের জন্য পদ্মা সেতু নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়েছে। সেখানে জাতীয় সংসদ ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানানো হয়। জাতীয় সংসদে আলোচনার অর্থ হচ্ছে, এটি রেকর্ড থাকবে, যা ইতিহাসের দলিল হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, বিদেশিরা বললেই যে ভালো- এটা ঠিক না। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে জাতি এই বিষয়টা অনুধাবন করেছে। বিদেশিদের কথায় পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তা কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ, এদেশ সম্পর্কি আমরাই সবচেয়ে ভালো জানি। বাইরের কেউ সেটা পারবে না।

তিনি আরও বলেন, এ কথা আজ প্রমাণিত যে, দুর্নীতি সম্পর্কে বিদেশ থেকে ঢালাও অভিযোগ আসলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশের অনেক টাকা পাচার হচ্ছে বলে, মানিলন্ডারিংয়ের কথা বলে, বলে সুইসব্যাংকে টাকা পাচার করছে। আমরা বললাম কারা পাচার করেছে তথ্য দিল না। তারা বলে প্রাইভেট সেক্টরের তথ্য দেয়া যাবে না। তারা আসলে মানিলন্ডারদের সাপোর্ট করে। কাজেই বিদেশিরা কিছু বললেই সেটা নিয়ে লাফালাফি করার সুযোগ নেই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, মামলা খেয়েছিলেন, দুর্নামের ভাগিদার হয়েছিলেন, তাদের পুরস্কৃত করা উচিত। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত। যারা অভিযোগ তুলেছিলেন তাদেরই এই ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব, আত্মপ্রত্যয়ের প্রতীক। তাই বিদেশিরা কিছু বললেই লাফালাফির কিছু নাই। বিদেশিদের সব পরামর্শ গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। এই শিক্ষা আমরা পদ্মা সেতু থেকে শিখেছি। পদ্মা সেতু সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়ে চলছে।

অনুষ্ঠানে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা নিজেরা যে কিছু করতে পারি, পদ্মা সেতু তারই প্রমাণ। স্বাধীনতা অর্জনের পর পদ্মা সেতু বড় ধরনের একটি মাইলফলক।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে যখন বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিল, তখন অনেকেই বলেছেন, পদ্মাসেতু করা সম্ভব না। তারা হতাশা থেকেই বলেছিলেন। কেননা, দীর্ঘদিন ধরে অবজ্ঞা, অবহেলার কারণে দেশের মানুষের মধ্যে একটা হতাশা জন্ম নিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেই হতাশাগ্রস্থ জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এবং দেশ স্বাধীন করেছিলেন। এরপর ৭৫ এ স্বপরিবাওে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আবার আমরা পরাধীন হয়ে গেলাম। আবার হতাশায় নিমজ্জিত হলাম।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে বললেন, আমরা নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতু করবো। এবং তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন। যারা পদ্মা সেতু হবে না বলে হতাশার কথা বলতো, তারা আজ তাদের জবাব পেয়ে গেছে।

মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের চলে যাওয়া সঠিক ছিল না, সেটিও আজ প্রমাণিত। বরং তাদের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া আমাদের জন্য সাপে বর হয়েছে। আমরা আমাদের নিজেদের শক্তিমত্তা উপলব্ধি করতে পেরেছি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে রাজনীতি এত বেশি প্রবল ছিল যে টেকনিক্যাল জটিলতার কথা কেউ দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি। দেশি বিশেষজ্ঞরা সবকিছু সামলেছেন। এই সেতু নিয়ে এই আলোচনা বহুদিন জারি থাকবে। কেননা পদ্মা সেতুর সাথে দেশের ১৬ কোটি মানুষের আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সবচেয়ে দুরূহ কাজটি সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। সে সময় একজন লোকও ছিল না, যারা পদ্মা সেতুকে লাভজনক বলেছে। তারা সঠিক ছিল না। সবাই বুঝে বিরোধিতা করেনি, শুধু এগিয়েছে ধারণার ওপর।

কোনো ধরনের আপস করা হয়নি। ১৩-১৪টা বিষয়ে পিএইচডি করার মতো বিষয় পদ্মা সেতুতে বিকশিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ধার করা অর্থে টেকসই উন্নয়ন হয় না। নিজস্ব অর্থায়নে, নিজেদের জ্ঞান ও বুদ্ধির বদৌলতে এ দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.