বুদ্ধিমানদের নাগরিকদের কথা শোনেনি শ্রীলঙ্কান সরকার

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রীলঙ্কায় অনেক বুদ্ধিমান মানুষ আছেন, অনেক বিজ্ঞ লোক আছেন। তাঁদের কথা শ্রীলঙ্কার সরকার ‘আমরা শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে শিক্ষা নেব। তারা সময়মতো সমস্যাগুলো অ্যাড্রেস করেনি। অনেক দিন থেকে তাদের সমস্যা ছিল।

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ শনিবার নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘বর্তমান সংকট, দায় এবং সমাধান’ শীর্ষক সেমিনারে সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অর্থনীতির সব সূচক ভালো থাকার পরও শ্রীলঙ্কার দ্রুত পতনের পেছনে দায়ী গোষ্ঠীতন্ত্র। তারা গোষ্ঠীতন্ত্র তৈরি করেছিল। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি। শ্রীলঙ্কার সফল একজন গভর্নর পদত্যাগ করেছেন। কারণ, সরকার গভর্নরের কোনো কথা শোনেনি। সেখানে যা কিছু করেছে, রাজা–বাদশাহরা করেছেন। তাঁরা ব্যাংককে যা করতে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা–ই করেছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আগে খেলাপি ঋণ ২২ হাজার কোটি টাকা ছিল। এখন তা ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এটা কী করে সম্ভব? চট করে ছয় থেকে সাত গুণ খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে? টাকা পাচার কারা করে, সেটি নীতিনির্ধারকেরা ভালো করেই জানেন। কিন্তু অর্থ পাচার রোধে সরকার শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান (মান্না) বলেন, ‘আমাদের মূল সংকট ডলার পাচার। আপনাদের মনে থাকতে পারে, একজন মন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, আমাদের রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলাদের বেগমপাড়ায় বেশি বাড়ি আছে। সংসদে খোদ প্রধানমন্ত্রীও এ কথা বলেছিলেন। কারা বিদেশে টাকা পাচার করেন, সেটি তিনি জানেন। তখন আমিসহ অনেকে বলেছিলাম, জানেন যদি তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু কোনো কিছু তাঁরা করেননি। এত দিন পর যদি আমরা বলি, আপনারা টাকা পাচারকারীদের পালেন।’

লিখিত বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের চরম সংকটকে পুঁজি করে সরকার তার কিছু গোষ্ঠীর হাতে অকল্পনীয় পরিমাণ টাকা তুলে দিতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ২ বছর থেকে ১৬ বছর বাড়িয়েছে। গত ১০ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর তিন বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘আমরা চাই বা না চাই, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে শ্রীলঙ্কার সংকট হতে পারে বলে কয়েক দিন আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএফএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা। এর সূত্র ধরে বিবিসি কিছু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা বানিয়েছে। ওই তালিকায় পাকিস্তান, লাওস, মালদ্বীপের সঙ্গে আছে বাংলাদেশও।’

মাহমুদুর রহমান দাবি করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ কাগজে–কলমে ৩২ বিলিয়ন ডলার আছে, যা বর্তমান আমদানির পরিমাণের হিসাবে মাত্র চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বি ডি রহমত উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প খুঁজে পাবেন না। এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২০০৫ কিংবা ২০০৬ সালে বিদ্যুতের ক্রাইসিস ছিল। সেই ক্রাইসিস পুঁজি করে এই সরকার তখন কুইক রেন্টাল প্রকল্পে যায়। যে পাওয়ার স্টেশন তিন বছরের জন্য করা হয়েছিল, সেই পাওয়ার স্টেশন বছরের পর বছর থাকছে। কিন্তু কেন? কাদের স্বার্থে এটা করা হয়েছে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কেবল বিদ্যুৎ খাত নয়, সব খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে।

নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহেদ উর রহমান বলেন, এ দেশের কিছু অর্থনীতিবিদ তাঁদের বক্তব্যে বর্তমান সংকটকে সরকারের ভুল নীতি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। এ দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে যত ভয়ংকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সব সরকার ঠান্ডা মাথায়, পরিণতি জেনে-বুঝে নিয়েছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.