২ মন্ত্রীর পদত্যাগ; চাপে বরিস জনসন

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এবং অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। গতকাল (মঙ্গলবার) তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন। এদিকে প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর পদত্যাগে বরিস জনসনের রক্ষণশীল সরকার রক্ষার চাপে পড়েছে।

সাজিদ জাভেদ বলেছেন, তিনি তার বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে পদত্যাগ দিলেন। পদত্যাগপত্রে সাজিদ বলেছেন, ‘দেশ এখন শক্তিশালী ও নীতিনিষ্ঠ রক্ষণশীল দল চায়। আর যে কোনো ব্যক্তির থেকে দল বড়। আমি বন্ধু হিসাবে আপনার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছি। কিন্তু আমরা সকলেই আগে দেশের সেবা করি।’

সাজিদ জানিয়েছেন, ‘মানুষ মনে করে, রক্ষণশীল দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর তারা মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে সেই সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা সবসময় জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিই না। কিন্তু দেশের স্বার্থে কাজ করি। কিন্তু খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণ আমাদের সম্পর্কে এটা ভাবছেন না। গত মাসের আস্থা প্রস্তাব দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের অনেক সহকর্মীও একই মতে বিশ্বাসী। এখন নতুন দিশা দরকার, যেটা আপনার নেতৃত্বে হবে না। তাই আমি আপনার প্রতি আস্থা হারিয়েছি।’

ঋষি সুনক তার পদত্যাগপত্রে বলেছেন, ‘মানুষ আশা করে সরকার ঠিক আচরণ করবে, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে এবং মন দিয়ে কাজ করবে। সম্ভবত এটাই আমার শেষ মন্ত্রিপদে থাকা, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এই মাপদণ্ডের জন্য লড়াই করা উচিত। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। ব্যক্তিগত স্তরে অনেক বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমার মতভেদ হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে আমি আপনার মতকেই সমর্থন করেছি। যৌথ দায়িত্বের সরকার এভাবেই চলে। এটাই আমাদের ব্যবস্থা। আর কঠিন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী একসঙ্গে কাজ করবেন এটাই প্রত্যাশিত।’

ঋষির বক্তব্য, ‘আমরা দুজনেই কম কর বসিয়ে বেশি আর্থিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চেয়েছি। বিশ্বমানের পরিষেবা দিতে চেয়েছি। কিন্তু এটা তখনই দেয়া সম্ভব, যখন আমরা এই লক্ষ্যে প্রচুর পরিশ্রম করতে, আত্মত্যাগ করতে এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত থাকি। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ সত্য জানতে চায়। তাদের জানা উচিত ভবিষ্যতের কোন পথটা ভালো। আগামী সপ্তাহে আমাদের যৌথ ভাষণের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি বুঝতে পারছি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে আলাদা। দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, এভাবে আমি আর কাজ চালিয়ে যেতে পারব না।’

এদিকে সাজিদ জাভেদকে জনসন বলেছেন, করোনাকালে তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন। ৫০ হাজার নার্স নিয়োগ করেছেন, ৪০টি নতুন হাসপাতাল করেছেন, ব্যবস্থার সংস্কার করেছেন। সরকার সেই কাজ আগে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি সাজিদের অভাব অনুভব করবেন।

ঋষিকে জনসন বলেছেন, ‘আপনি অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরপরই লকডাউন ঘোষণা করতে হয়। তখন অর্থনীতিকে বাঁচাতে আপনি অসাধারণ কাজ করেছেন। আপনি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। করোনাকালে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সাহায্য করেছেন। এর পাশাপাশি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেও আপনি পিছপা হননি। আমরা সাধারণ মানুষের জন্য কর ছাড়ও দিচ্ছি। আমি আপনার পরামর্শকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই। আপনার অভাব আমি অনুভব করব।’

সাজিদ ও ঋষি দুজনেই রক্ষণশীল দলের দাপুটে নেতা। দুজনকেই বরিস জনসনের উত্তরসূরি হিসাবে ভাবা হচ্ছিল। ৫২ বছর বয়সি জাভেদ আগে অর্থমন্ত্রী ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। ঋষির বয়স ৪২ বছর। জনসন তাকে অর্থমন্ত্রী করার আগে তাকে মানুষ খুব বেশি চিনতেন না। কিন্তু করোনাকালে তিনি লাখ লাখ চাকরি বাঁচাবার জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করেছেন। করোনাকালে তার কাজের জন্য ঋষি জনপ্রিয় হন।

গত মাসেই দলের মধ্যে আস্থা ভোটে জিতেছেন জনসন। তখন দেখা গিয়েছিল, দলের বেশ কিছু এমপি তার কাজে সন্তুষ্ট নন। এবার দুই প্রবীণ মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। ফলে নতুন করে আবার জনসন সংকটে পড়েছেন। বিরোধী লেবার পার্টির নেতারা বলেছেন, জনসন আর প্রধানমন্ত্রী থাকার উপযুক্ত নন। অনেক আগেই তার চলে যাওয়া উচিত ছিল। এখন বাকি মন্ত্রীদেরও পদত্যাগ করা উচিত বলে লেবার নেতারা মনে করছেন।

করোনার বিধি লঙ্ঘন করে একাধিক পার্টি আয়োজন করে সমালোচিত হয়েছিলেন বরিস জনসন। এজন্য প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে পদত্যাগের চাপে ছিলেন তিনি। অবশ্য, তিনি পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে উতরে যান।

তবে সরকার পরিচালনায় বরিস জনসনের সক্ষমতা নিয়ে নিজ দল ও দলের বাইরে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন তিনি। রক্ষণশীল দলের এমপি ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন বরিস জনসন। এর পরও তাকে সরকারের ডেপুটি চীফ হুইপ করেন প্রধানমন্ত্রী জনসন।

এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে আবারও ক্ষমা চান বরিস জনসন। তবে নিজ দল থেকেই এবার তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এ নিয়ে ভীষণ চাপে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যেই সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণা তার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। সূত্র: ডিডাব্লিউ, পার্সটুডে, এপি, এএফপি, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.