আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনে আমি ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাবা-মা-ভাই হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের পাশেই আমি আছি, আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, এই ওয়াদা আমি দিয়ে গেলাম। নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।

শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। এর আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেষে বেলা ১২টা ৫৩ মিনিটে মাদারীপুরের শিবচরের সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা-ভাইয়েরা। আমি ও আমার ছোট বোন বেঁচে আছি। এই পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের অনেক অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উপদেষ্টা আবুল হোসেন, সচিব মোশারফ, উপদেষ্টা মশিউর রহমান, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদেরকে অপমান করা হয়েছে। আমার ছেলে-মেয়ে জয়-পুতুল, রেহানার ছেলে ববিসহ কত মানসিক যন্ত্রণা তারা দিয়েছে। কিন্তু, আমরা পিছু হটি নাই। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল। আমরা এই সেতু নির্মাণ করব। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমরা করব। আমরা সেটা করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে এই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে যাই। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘কখনোই সেতু করতে পারবে না’। আমরা কিন্তু করতে পেরেছি, আপনারা পাশে ছিলেন বলে। জনগণের শক্তি বড় শক্তি। আমি সেটাই বিশ্বাস করেছি।

জনসভায় উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, আপনারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেই সম্ভব হয়েছে। সারা দেশের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতু প্রমাণ করে জনগণই শক্তি, বড় শক্তি। আজ আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ একটি দিন। আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে আসলাম।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে যারা জমি দিয়েছিলেন, তাদের ঘর করে দিয়েছি, জমি দিয়েছি। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একটা কথা মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা।

সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওপারে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ১২টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি ফলক মঞ্চে যান তিনি। সেখানে দ্বিতীয় দফায় মোনাজাতে অংশ নেন। জাজিরা প্রান্তে সেতুর মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর একপাশে তার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং অপর পাশে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেতুর টোল প্লাজার কিছুটা আগে এক পাশে অস্থায়ী প্যান্ডেলে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে ভাষণ শেষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম, সিলমোহর ও ১০০ টাকার স্মারক নোট উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর গাড়িবহর নিয়ে ১১টা ৫৫ মিনিটে টোল প্লাজায় টোল প্রদান করেন তিনি। ১১টা ৫০ মিনিটে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১টা ৫৯ মিনিটে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.