‘বন্ড মার্কেট গড়ে উঠলে পুঁজিবাজারে মূলধন বাড়ার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমবে’

স্টক এক্সচেঞ্জে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত গর্ভনর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, পুঁজিবাজার এবং মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মিলিতভাবে কাজ করলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির আরো উন্নতি হবে। তিনি বলেন, সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি লেনদেন স্টক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে করার মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে উঠবে এবং পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। সেইসঙ্গে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমার পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এই যৌথ পদক্ষেপকে একত্রে কাজ করার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবেও বর্ণনা করেন তিনি।

স্টক এক্সচেঞ্জে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনের মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে একটি সমঝােতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রোববার (১২ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উদ্যোগে স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে সমঝােতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থ বিভাগের (টিডিএম) অতিরিক্ত সচিব রেহানা পারভীন। এছাড়াও স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন চালুকরণ কার্যক্রম বিষয়ে উক্ত অনুষ্ঠানে যৌথভাবে একটি উপস্থাপনা পেশ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ মো. লুৎফুল কবির এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান,  সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিকদার, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকারী সকল পক্ষের নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর  করেন। এসময় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর পরিচালক মো. আবুল কালাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (ডিএমডি) খন্দকার সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম ফারুক এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত গর্ভনর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে উঠলে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমে আসবে এবং নন পারফর্মিং লোনও (এনপিএল) কমে আসবে। বর্তমান ১৬ শতাংশ মার্কেট ক্যাপ টু জিডিপি রেশিওকে দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ভবিষ্যতেও একত্রে সমন্বয় ও পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা BOID এর মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পুঁজিবাজারে লেনদেনকৃত সরকারি সিকিউরিটিজের অভিহিত মূল্য হবে ১০০ টাকা এবং মার্কেট লট হবে ১০০০ অর্থাৎ ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা অভিহিত মূল্যের সরকারি সিকিউরিটিজ স্টক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করা যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সাধারণ বিনিয়ােগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে সরকারি সিকিউরিটিজ এর মতো ঝুঁকিবিহীন সিকিউরিটিজ অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন, ফলে বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও ঝুঁকি কমে যাবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে আভ্যন্তরীণ খাত হতে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা কমে আসবে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট তৈরি হবে এবং বাজার মূলধন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। সরকারি সিকিউরিটিজ সেকেন্ডারি বা স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্ল্যাটফরমে লেনদেনের কারণে বিভিন্ন মেয়াদের বন্ডের yield curve পাওয়া যাবে। এই yield curve এর ভিত্তিতে অন্যান্য বন্ডের কুপন অথবা সুদহার/লভ্যাংশ নির্ধারণ করা সহজ হবে এবং yield curve এর ভিত্তিতে বিভিন্ন মেয়াদের বন্ডের ভবিষ্যত সুদহার/লভ্যাংশ প্রাক্কলন করা যাবে।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.