টিপু হত্যা: ‘পরিকল্পনাকারী’ মুসা রিমান্ডে

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজ শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতি হত্যা মামলায় ওমান থেকে ফিরিয়ে আনা সন্দেহভাজন মূল ‘পরিকল্পনাকারী’ সুমন সিকদার ওরফে মুসার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শুক্রবার (১০ জুন) মুসাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দার আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

এর আগে, শুক্রবার (১০ জুন) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুটার মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তার দেওয়া জবানবন্দিতে মুসাকে মূল পরিকল্পনা ও সমন্বয়কারী হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারপর থেকেই মুসাকে আমরা খুঁজছিলাম। টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে ঘটনার আগেই মুসা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। আমরা তদন্তের এক পর্যায়ে জানতে পারি মুসা ওমানে অবস্থান করছে। তখন আমরা ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেস্ক ওমানে ইন্টারপোল ডেস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওমান পুলিশ মুসাকে আটক করার পর সেখানকার পুলিশ আমাদের এসকর্ট পাঠিয়ে নিয়ে আসার জন্য বলে। ডিবি মতিঝিল বিভাগে দুজন এডিসি ও পুলিশ সদর দফতরে ইন্টারপোল ডেস্কের একজন সহকারী কমিশনারকে ওমান পাঠানো হয়। তারা গতকাল বৃহস্পতিবার মুসাকে নিয়ে দেশে ফেরেন।

তিনি বলেন, মুসা এবং এই মামলায় আগে গ্রেফতার আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গ্রেফতার আসামিদের দেওয়া তথ্য ও মুসার কাছে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে আসামিদের মুখোমুখি করা হবে।

মুসাকে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী বলা হলেও নিহত টিপুর স্ত্রী বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, মুসা প্রধান পরিকল্পনাকরী হতে পারে না। এর পেছনে অন্য কারো হাত রয়েছে। এ বিষয়ে ডিবি প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাফিজ আক্তার বলেন, মুসাকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তখন অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুর থানাধীন আমতলা এলাকা হতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু তার ড্রাইভার মনির হোসেন মুন্না এবং দুই বন্ধু মিরাজ ও আবুল কালাম এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার সংলগ্ন গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট হতে মাইক্রোবাসযোগে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথে অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে টিপু ও তার ড্রাইভার এবং রিকশারোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি নামক মেয়েকে গুরুতর জখম করে। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক টিপু ও রিকশারোহী প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় শাহজাহনপুর থানায় একটি মামলা রুজু হয়।

গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। ঘটনার মূল শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে (৩৪) গত ২৭ মার্চ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দিতে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হিসাবে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুমন সিকদার মুসার সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাকে গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ।

এই মামলায় মোট ১৩ জন আসামি গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী সুমন সিকদার মুসা এবং শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ অন্যতম। গ্রেফতার সুমন সিকদার মুসার নামে ঢাকা মহানগরের পল্লবী, মতিঝিলসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলাসহ ১২-১৩টি মামলা রয়েছে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.