‘পাচারের টাকা ফিরিয়ে আনতে আপনার বাধা দিয়েন না’

সাংবাদিকদের প্রতি অর্থমন্ত্রীর আহ্বান

নানা উপায়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

শুক্রবার (১০ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিদের উদ্দেশ্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনতে আপনারা বাধা দিয়েন না। বাধা দিয়ে আপনাদের কী লাভ? তারচেয়ে এই অর্থ দেশে ফেরত আসলে তা উন্নয়নে ব্যবহার করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার  প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। এতে তিনি মাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিনাপ্রশ্নে পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে বৈধ করার প্রস্তাব দেন।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে করা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরকে আহ্বান জানান। গভর্নর অবশ্য টাকা পাচারের অভিযোগই অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় পাচার করার টাকার কথা বলেননি। তিনি (অর্থমন্ত্রী) বলেছেন, বিদেশে অর্জিত টাকার কথা।

গভর্নর আরও বলেন, দেশে অর্থ পাচার রোধে আইন আছে। বিএফআইইউসহ একাধিক এজেন্সি আছে। তারা সবসময় এ বিষয়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত টাকা পাচারের কোনো প্রমাণ পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএফআইইউ।

তিনি বলেছেন, বিভিন্ন সময় সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমাকৃত অর্থ সম্পর্কে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, দেখা গেছে তার ৯৫ ভাগই বিদেশে অর্জিত। কিছু আছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন নিষ্পন্নের অপেক্ষায় থাকা অর্থ।

তবে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী অর্থপাচারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, টাকার ধর্ম হচ্ছে, যেখানে রিটার্ন বেশি, সেখানে চলে যাওয়া। নানা কারণে দেশ থেকে টাকা চলে গিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এই টাকা ব্রিফকেসে করে কেউ নিয়ে যায়নি। হুন্ডি বা অন্য কোনো উপায়ে নিয়ে গেছে। তাই অনুমান করা গেলেও প্রমাণ করা যায় না। এ কারণে এসব অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে এই টাকা জাতীয় অর্থনীতির স্রোতে এক হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এমনও অনেকে আছে, টাকা পাচার যে অপরাধ তা-ও জানতো না।

তিনি বলেন, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনলে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করবে না মর্মে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সরকার তা নিশ্চিত করবে। কারণ প্রশ্ন করলে কেউ টাকা আনতে চাইবে না।

মুস্তফা কামাল বলেন,বিদেশ থেকে টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, নরওয়ে, মালয়েশিয়াসহ একাধিক দেশ বিভিন্ন সময়েএমন সুযোগ দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কোরআন শরীফের একটি আয়াত পাঠ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহণকারী-উভয়ের জায়গা হবে জাহান্নামে। আমরা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য কাজ করছি না। কাজ করছি দেশের উন্নয়নের জন্য।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনিসহ একাধিক মন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.