‘বাজেটে রংপুর বিভাগের শিল্প-বাণিজ্যের উন্নয়নে কিছু নেই’

আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা রংপুর বিভাগের  ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ বা সুবিধা রাখা হয়নি। ঘোষিত বাজেটের উপর দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু এ কথা বলেছেন।

রংপুর চেম্বারের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

রংপুর চেম্বারের সভাপতি বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৪১ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপক পরিকল্পনা থাকলেও সারাদেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও রংপুর বিভাগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য। তাই এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর বিভাগের জন্য পোশাক ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প জোন গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নয়ন বৈষম্য দূরীকরণে রংপুর বিভাগের আট জেলার উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখা, এ বিভাগের শিল্পায়নে আলাদা ঋণ, কর ও ভ্যাট নীতি প্রণয়ন, রংপুরে প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকোনমিক জোন ও উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ‘‘নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি’’ গঠনের বিষয়গুলো অর্ন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল বলে। কিন্তু বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের জন্য তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা ও অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব না থাকায় রংপুর চেম্বার হতাশ।

তিনি রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর চেম্বারের প্রস্তাবগুলো সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানান।

রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু সামগ্রিকভাবে প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মূল্যম্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য, কৃষি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি,শিক্ষা, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি খাতে রেকর্ড পরিমান ভর্তুকি, মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্বাভাবিক রাখতে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা, কর ও ভ্যাট কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আর বিনিয়োগকে চাঙা করার চেষ্টার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং খাদ্য, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, বাজেট ঘাটতি কমানো, নতুন দারিদ্র্য ঠেকানো, দেশী-বিদেশী নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে করপোরেট করহার হ্রাসের উদ্যোগ ব্যবসা ও শিল্প সহায়ক।

তিনি বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থ পাচার রোধ এবং প্রবৃদ্ধির সুফল যেন সুষমভাবে বন্টন হয় সেদিকে নজর দেয়ার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এছাড়া ব্যাপক কর্মসৃজনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে এবং উৎপাদন ব্যয় কমাতে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি, নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় ভর্তুকি প্রদানের মত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত থাকায় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে বলে প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী।
প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে মন্তব্য করে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক উৎস, অবকাঠামো তহবিল, অবকাঠামো বন্ড ও অন্যান্য আর্থিক উপাদানের ওপর জোর দেওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীদের জন্য থোকভিত্তিক করব্যবস্থা প্রবর্তন করা, আয় অনুসারে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করে পৃথক করকাঠামো গঠন এবং আয় অনুসারে করছাড়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত থাকার পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা থাকলে নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসা ও শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হতো বলে রংপুর চেম্বার মনে করে। ।
প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মেড ইন বাংলাদেশ পণ্যে কর অব্যাহতি থাকায় অটোমোবাইল, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ও হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.