টানা চারদিনই বেড়েছে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম

আন্তঃব্যাংক রেটে এক ডলারে পাওয়া যাবে এখন ৯২ টাকা

প্রতিদিনই বাড়ছে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম। আর ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে দেশীয় মুদ্রা টাকা। মঙ্গলবার (০৭ জুন) আবারও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এবার খুব সামান্য পরিমাণে কমানো হয়েছে। এদিন ডলারের দাম মাত্র ৫ পয়সা বাড়িয়ে পূর্ণসংখ্যা ৯২ টাকা করা হয়েছে। টানা চার কার্যদিবসের প্রতিদিনই বাড়ানো হয়েছে ডলারের দাম। এই চার দিনেই ডলারের দাম বেড়েছে ৩ টাকা ৪৫ পয়সা।

এর আগে, সোমবার (০৬ জুন) বাড়ানো হয়েছে ৪৫ পয়সা। একইভাবে, রোববার (০৫ জুন) একবারেই বাড়ানো হয়েছে এক টাকা ৬০ পয়সা। আর বৃহষ্পতিবার বাড়ানো হয়েছিল ৯০ পয়সা। ফলে ২ দিনে টাকার মান কমল ২ টাকা ৫ পয়সা। এর ফলে সর্বশেষ প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। আজ বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন দামে ডলার বিক্রি করেছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডলারের দাম ৯০ পয়সা বাড়িয়েছে। একইভাবে গত সোমবার (২৭ মে) একবারেই ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়ানো হয়েছিল ডলারের দাম। এই নিয়ে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর চার দফায় ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে।

ডলারের দাম বাড়ায় একদিকে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে।

আজ নতুন দাম ৯২ টাকায় ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি আমদানি বিল মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়। ফলে এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। এই দরে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ডলারের বিপরীতে টাকার হিসাব করে থাকে। এটাকে বলা হয় আন্তঃব্যাংক রেট।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ৯২ টাকা নির্ধারণ করলেও ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দরে। অনেক ব্যাংক বাড়তি দামেই প্রবাসী আয় সংগ্রহ করছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে। এতে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকায়।

অস্থির ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের চাহিদা বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে দাম বাড়াচ্ছে। সেইসাথে রিজার্ভ থেকেও প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডলারের বাজার। এই অবস্থায় ডলারের দাম বাজারের উপর অর্থাৎ চাহিদা-জোগানের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে একদিকে ব্যাপক হারে আমদানির চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। কিন্তু সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়েনি। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার কারণে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করছে। এতে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না ডলারের দাম। এ অবস্থায় ডলারের দাম নির্ধারণ না করে চাহিদা-যোগানের উপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

ব্যাংকাররা বলছেন, চাহিদা বাড়ায় ডলারের দাম বাড়ছে। অনেক বিদেশি ব্যাংক ডলার ৯৪/৯৫ টাকায় কিনছে। এখন দর ঠিক রাখতে হলে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেটে কেনাবচা করছে না অধিকাংশ ব্যাংক। ফলে মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বাড়ছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ডলারের দাম বাজারের ওপর নির্ভয় করে। আমাদেরও সেই দিকেই যাওয়া উচিত।

তাদের মতে, ডলার নিয়ে দেশের মুদ্রাবাজারে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিগগিরই এ সংকট কমার কোনো লক্ষণ নেই। এ সংকটের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থায় নগদ টাকারও সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে চলতি হিসাবে লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, গত বৃহস্পতিবার (০২ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। তবে হঠাৎ যেন ডলারের দাম বেশি বাড়িয়ে না ফেলা হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। পাশাপাশি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো যাতে দাম বেশি বাড়াতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।

এদিকে, আমদানি পণ্যের দাম ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে সেই খরচ মেটানো যাচ্ছে না। এতে ডলারের সংকট তৈরি হচ্ছে। সংকট সামলাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতেই বেড়ে গেছে ডলারের দাম। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দামের সীমা বেধে দেওয়ার ৪দিন পর আবার তুলে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এতে কমে আসছিল প্রবাসী আয়। যা এখন ব্যাংকগুলোর উপরেই ছেড়ে দেওয়া হযেছে।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.