ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপির আওতামুক্ত থাকতে চান ব্যবসায়ীরা

চলতি বছরের (২০২২ সাল) ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপির আওতামুক্ত থাকতে চান তারা। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই সুবিধা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

মঙ্গলবার (৩১ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরের সভাপতিত্বে ডেপুটি গভর্নরসহ দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

জসীম উদ্দীন বলেন, আমাদের অনেকগুলো এজেন্ডা ছিল। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড পরবর্তীতে সারাবিশ্বে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে। ফলে আমাদেরও আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো অবস্থায় নেই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় আমাদের সব সদস্যরা জানিয়েছেন যেসব চলমান ঋণ রয়েছে, সেগুলো যেন ডিসেম্বর পর্যন্ত রিসিউডউলের সুযোগ দেয়া হয়। অর্থাৎ খেলাপি না করা হয়।

তিনি আরো বলেন, পুনঃতফসিল সুবিধা দিলে ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই ভালো হবে। কেননা কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে ব্যাংকও সাথে সাথে খেলাপি হয়ে যায়। এর ফলে খেলাপি ঋণ মাঝে কমলেও এখন আবার ১৪ শতাংশ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এই বিষয়ে পজেটিভ চিন্তাভাবনা করছেন।

ইডিএফ ফান্ডের আকার ১০ বিলিয়নে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়েও আমরা গভর্নরকে অনুরোধ করেছি। বর্তমানে এর আকার সাড়ে সাত বিলিয়ন। এটাকে যেন ১০ বিলিয়নে উন্নীত করা হয়।

আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোতে যেন দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে অনুরোধ করেছি। কারণ ব্যবসার জন্য লংটাইম ফাইন্যান্সিং খুবই জরুরি। এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অন্তত ১০-১৫ শতাংশ ঋণ যাতে এই তহবিলের আওতায় আমরা ব্যবসায়ীরা পেতে পারি। আর এই তহবিলের পুনঃঅর্থায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তাছাড়া আমরা রেমিট্যান্স প্রণোদনা আরও বাড়ানোর কথা জানিয়েছি। একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা দেশের বাইরে থেকে রেমিট্যান্স পাঠাবেন তাকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিলে তিনি উৎসাহিত হন। তবে আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্তণালয়কে অনুরোধ করবো যাতে, যেসব জায়গা থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসে, সেসব জায়গায় গিয়ে রেমিটারদের পুরস্কৃত করা। যদিও তারা দেশে আসার পরে তাদের সিআইপিসহ নানা ধরণের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

সভাশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য যে এক্সিট সুবিধা দেয়া হয়েছিল সেটার সময় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু উনারা আবার চাচ্ছেন বিভিন্ন ঋণগুলো যাতে ডাউনপেমেন্ট দিয়ে যাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুনরায় চালু রাখা যায়, এরকম একটি দাবি তারা জানিয়েছে।

এফবিসিসিআই ঋণ পুনতফসিলে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাইলেও বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে। ব্যাংকগুলোর দিকেও তাকাতে হবে। করোনাকালীন সময়ে যে প্রেক্ষিতে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে এখন অনেকটাই আমরা সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি। তাই এই বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখা হবে। কারণ এখানে ব্যাংকের স্বার্থও জড়িত রয়েছে। ফলে সার্বিক পর্যালোচনার মাধ্যমে বিচার-বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

দ্বিতীয়ত, পরিবহনসহ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো যাতে ২ শতাংশ ডাউন-পেমেন্ট দিয়ে তাদের ঋণগুলো চালু রাখতে পারে এটাও তাদের দাবি ছিল।

এ বিষয়ে গভর্নর বলেছেন, এটা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। কেননা আগে তো ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে সরকারের একটা নিয়ম ছিল। সেটার মেয়াদ তো শেষ হয়ে গেছে। এখন সব খাতেই যাতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে যাতে পুনরায় শ্রেণীকরণ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য এক্সিট সুবিধার আওতায় করা যায় কি না সেটাও পর্যালোচনা করা হবে।

এছাড়া রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে, তবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একক ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। বিষয়টি সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। ইডিএফ ফান্ডের বিষয়েও বলা হয়েছে, পর্যালোচনা করে দেখা হবে। আর ব্যাংকগুলো সাধারণত স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ঋণের জন্য তারা একটি তহবিলের দাবি জানিয়েছে। কেননা তাদের দীর্ঘমেয়াদে ঋণের দরকার হয়। এই বিষয়টিও পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.