অলিম্পিকের শেয়ারের এমন দাম দেখেনি কেউ

পুঁজিবাজারে খাদ্য খাতের কোম্পানি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম কেবলই কমছে। আজ নিয়ে টানা ৬ষ্ঠ দিন শেয়ারের দর হারিয়েছে কোম্পানিটি। আর এই ৬ দিনে অলিম্পিকের শেয়ারের দাম ১১ শতাংশ কমে ১৩৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকা ৯০ পয়সায় নেমে এসেছে। কোম্পানিটির শেয়ারের এত কম দাম সাম্প্রতিক সময়ে দেখেনি কেউ।

দীর্ঘ দিন দেশের পুঁজিবাজারে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় শেয়ারগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। সেরা ১০/১২টি দামী শেয়ারের একটি ছিল এটি। বাজার মন্দার কারণে সাময়িকভাবে শেয়ারের দাম কমলেও কিছুদিনের মধ্যেই তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ২০১০ বুদ্বুদপূর্ণ বাজারে যারা অনেক চড়া দামে এই কোম্পানির শেয়ার কিনেও ধরে রেখেছিলেন ৬/৭ বছর পর তারা মুনাফা নিয়ে বের হতে পেরেছেন। এমন শেয়ারের এত নড়বড়ে অবস্থা আর কখনো-ই দেখা যায়নি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিসংখ্যান অনুসারে, গত দুই বছরের মধ্যে গতবছরের ১৩ সেপ্টেম্বর শেয়ারটির দাম সর্বোচ্চ ২১১ টাকা ৩০ পয়সায় উঠেছিল। এরপর থেকেই প্রায় টানা দর পতন চলছে। আজকের দামটি সর্বোচ্চ দাম থেকে ৯২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৪৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ কম।

গত ৩ মাসে ডিএসইতে ৫৭ দিন লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ দিন (৭৪%) শেয়ারটির দাম কমেছে। বেড়েছে মাত্র ১৫ দিন। এই সময়ে অলিম্পিকের শেয়ারের দাম কমেছে ৩৪ টাকা ৬০ পয়সা বা ২২ দশমিক ৫৪ শতাংশ

ডিএসইর ওয়েবসাইটে বর্তমানে একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম সংক্রান্ত ২ বছরের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে অলিম্পিকের শেয়ারের আজকের দামটি-ই সবচেয়ে কম।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ৫ বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখে গেছে, আজকের দামটি সর্বনিম্ন। আজ বৃহস্পতিবার (২০ মে) সিএসইতে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের ক্লোজিং মূল্য ছিল ১১৯ টাকা ৪০ পয়সা।

এই বাজারে গত ৫ বছরে অলিম্পিকের শেয়ারের দাম ২৮৯ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত উঠেছিল। ২০১৭ সালের ৩ আগস্টসহ চারদিন এই দামে শেয়ারটি কেনাবেচা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফার প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া, নানা অপরাধে কোম্পানিটির কর্ণধার আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিদেশে পালিয়ে থাকা, কোম্পানিটি বিক্রি করে দেওয়ার উদ্যোগে অচলাবস্থা এবং বিস্কিট ও স্ন্যাক্সের বাজারে বড় বড় কোম্পানির আগমনে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে কোম্পানিটির ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আর আগের মতো আশাবাদী বা উচ্ছ্বসিত নন। এর প্রভাবেই টানা কমে চলেছে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১০ টাকা ১৯ পয়সা। এর বিপরীতে চলতি বছরের প্রথম ৩ প্রান্তিক তথা ৯ মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ১২ পয়সা। এটিকে বার্ষিকীকরণ করলে ইপিএস দাঁড়ায় ৬ টাকা ৮২ পয়সা। চলতি তথা চতুর্থ প্রান্তিকে আগের তিন প্রান্তিকের তুলনায় ইপিএস কিছুটা বাড়লেও মোট ইপিএস ৮ টাকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এদিকে কোম্পানির শেয়ারধারণের পরিসংখ্যান অনুসারে, সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডার (Sponsor Shareholder) ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কমেছে। গত বছরের ৩০ জুন তারিখে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তাদের ধারণকৃত শেয়ারের হার ছিল ৩৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল তা কমে হয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের হার ২৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে কমে ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ হয়েছে। এই সময়ে অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের হার সামান্য বেড়ে ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ থেকে ২০ দশমিক ০২ শতাংশ হয়েছে। এই সময়ে সাধারশেয়ারহোল্ডারদের ধারণকৃত শেয়ারের হার বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ফ্লোটিং শেয়ার বেড়েছে। আলোচিত সময়ে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ধারণকৃত শেয়ারের হার ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ হয়েছে।

১৯৮৯ সালে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়া অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ১৯৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার।

সর্বশেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩১ মার্চ, ২০২২ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৪৫ টাকা ৯৩ পয়সা।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.