ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, মতভিন্নতা অর্থনীতিবিদদের

ডলারের দাম বাড়ানো নিয়ে দেশের অর্থনীতিবিদেরা দুই ধরনের মতামত দিয়েছেন। কেউ কেউ ডলারের দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেছেন।

মঙ্গলবার (১৭ মে) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে অনলাইনে অনুষ্ঠিত প্রাক বাজেট আলোচনায় এই মতামত তুলে ধরেন তারা। এসময় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বাজেট প্রণয়নের আগে অর্থনীতিবিদদের মতামত নিতে ওয়েবিনারে বৈঠকে বসেন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে বৈঠকটি প্রাক বাজেট নিয়ে হলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি।

বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ডলারের দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেন, এতে আমদানি নিরুৎসাহিত হবে বলে মত তাঁদের। কিন্তু বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ডলারের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না বলে মত দেন। তাদের যুক্তি হলো, ডলারের দাম বাড়ালে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। তখন মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের অসন্তোষ আরও বাড়বে। তাই ডলারের দাম না বাড়িয়ে কিছুটা সময় দেখে চলার মত দেন তারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ, বর্তমান গভর্নর ফজলে কবীর, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ, সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রমুখ।

দেশে ডলার সংকট তীব্র হচ্ছে। টাকার বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। ব্যাংকের পাশাপাশি খোলা বাজারে ও বাড়ছে ডলারের দাম । কয়েক দফা ২০/২৫ পয়সা করে ডলারের দাম বাড়ানোর পর গতকাল এক লাফে ৮০ পয়সা দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাংলাদেশ ব্যা়ংক ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করলেও আমদানি র বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৯৬-৯৭ টাকা। আর খোলাবাজারে যা আজ ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেয়া অর্থনীতিবিদ দের কেউ বলেছেন, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে সরকার যে প্রণোদনা (আড়াই শতাংশ) দিচ্ছে, তা বন্ধ করতে। কারণ, এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে। আবার কেউ বলছেন, প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে। এতে হুন্ডির দিকে মানুষ অতটা ঝুঁকবে না, বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার বাড়বে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সব অর্থনীতিবিদ আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন।

বিবিএসের তথ্য বলছে, দেশে এখন মূল্যস্ফীতির হার ছয় শতাংশের ওপর। বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বাড়ছে, তাই দরিদ্র মানুষদের জন্য ওএমএস ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়াতে হবে। বোরোর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে কৃষকদের।
বৈঠকে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দেওয়া হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, পোশাক খাতকে সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, অন্য খাতকে তা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অন্য কোনো খাত উঠে আসছে না-বিকশিত হচ্ছে না। পোশাক খাতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এ সুবিধা অন্য খাতে দেওয়া হয়নি।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.