টাকার কাছে কুপোকাত পাকিস্তানি রূপি

টাকার বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে পাকিস্তানি রুপি। কয়েক মাস ধরেই দর হারাচ্ছে এই দেশটির মুদ্রা। শুধু টাকার সঙ্গে না, ডলারের বিপরীতেও দুর্বল অবস্থানে পাকিস্তানি রুপি। এখন এক টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এক দশমিক ৮৯ পাকিস্তানি রূপি। আর ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে অন্তত ১৮৯ রুপি। সেই হিসাবে টাকার মান এখন পাকিস্তানি রূপির প্রায় দ্বিগুণ।

উন্নয়নের দিক দিয়ে পাকিস্তানকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যবধান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দুই দেশের মধ্যে নানা সূচকের ব্যবধান। আর এর প্রভাব পড়েছে দুই দেশের মুদ্রার মানেও। অর্ধশতক আগেও যারা শাসন করতে চেয়েছিলো বাংলাদেশকে আজ তাদের মুদ্রার (পাকিস্তানি রুপি) মানের থেকেই বাংলাদেশি টাকার মান প্রায় দ্বিগুণ।

বাংলাদেশের ১০০ টাকায় পাকিস্তানে পাওয়া যায় ১৮৯ রুপি। অথচ স্বাধীনতার পরপর চিত্রটা ছিল পুরো উল্টো। তখন পাকিস্তানের একশ রুপির মান ছিল বাংলাদেশের ১৬৫ টাকা।

২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ ও মুদ্রানীতি বিভাগের যৌথ এক গবেষণাপত্রে বলা আছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি প্রথম মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় যুক্তরাজ্যের এক পাউন্ড স্টার্লিংয়ে পাওয়া যেত বাংলাদেশি ১৮ দশমিক ৯৬ টাকা। তখন পাউন্ডের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রার মান ছিল ১১ দশমিক ৪৩ রুপি। সেই হিসাবে পাকিস্তানি তখন এক রুপির বিপরীতে বাংলাদেশকে খরচ করতে হতো এক দশমিক ৬৫ রুপি।

অন্যদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির পতন অব্যাহত রয়েছে। আর এতেই কার্যত তলানিতে ঠেকেছে পাকিস্তানি রুপির দর। ইতিহাসে এর আগে কখনও পাকিস্তানের এই মুদ্রার মান এতো নিচে নামেনি।

জানা যায় গতকাল মঙ্গলবার (১০ মে) এক ধাক্কায় ৮২ পয়সা কমে গেছে পাকিস্তানি রুপির মান। আন্তঃব্যাংক বাজারে প্রতি ডলারের বিপরীতে মিলছে ১৮৮ দশমিক ৬৬ রুপি। এর আগে কখনো পাকিস্তানের মুদ্রার দর এতো নিচে নামেনি। ফরেক্স ডিলারদের দাবি, লাহোরের খোলাবাজারে এক ডলার পাকিস্তানের ১৮৯ রুপিরও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। খবর দ্য ডন।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিনের ভিত্তিতে পাকিস্তানি রুপি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বা ১ দশমিক ১৩ রুপি হারিয়েছে। অন্যদিকে আগের দুটি সেশনে ১ দশমিক ৮৪ রুপি দাম বেড়েছে মার্কিন ডলারের।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ক্রমবর্ধমান বিনিময় হার পাকিস্তানের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। অস্বাভাবিক আমদানি বৃদ্ধি এবং সেই তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধি কম হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে মূল্য হারাচ্ছে পাকিস্তানি রুপি।

মূলত রুপির এই মূল্যহ্রাস বাণিজ্য ঘাটতিতেও প্রতিফলিত হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তানে বাণিজ্য ঘাটতি পৌঁছেছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে।

পাকিস্তানের মুদ্রাবাজারের ডিলাররা বলছেন, ডলারের উচ্চ চাহিদার কারণেই মূলত মার্কিন এই মুদ্রার দাম বাড়ছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, ডলারের ক্রমবর্ধমান এই মূল্য পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ বাড়াতে পারে।

অর্থসূচক/এমআর/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.