বিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলঙ্কায় নিহত ৫

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। বিক্ষোভকারীরা শাসকদলের তিনজন সাবেক মন্ত্রী ও দুইজন এমপি-র বাড়িতে আগুন ধরিয়েছে। রাজাপাকসেদের পৈত্রিক বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। প্রেসিডেন্টের অফিস ঘিরে বিক্ষোভ চলছে।

নিহতদের মধ্যে ক্ষমতাসীন এক এমপি ও এক বিক্ষোভকারীও রয়েছেন। এছাড়া আহতদের দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে কলম্বোয় বিক্ষোভকারীরা পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্র রাজাপাকসের বাড়ি ঘিরে ধরে দুইটি গেট ভেঙে দেয়। তারপরই সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই বাস পুড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা। হামবানকোটায় রাজাপাকসেদের পৈত্রিক বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া প্রেসিডেন্টের অফিসের সামনেও আগুন ধরানো হয়।

এদিকে প্রেসিডেন্টের অফিসের সামনে তার সমর্থক ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে প্রেসিডেন্টের অফিস ঘিরে রাখে নিরাপত্তাবাহিনী। সোমবার সেখানে প্রচুর সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা বিক্ষোভ থামাতে গুলি চালান। তার আগে কাঁদানে গ্যাসও ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কিছুতেই পিছু হটতে রাজি নয় বিক্ষোভকারীরা।

শ্রীলঙ্কার শোচনীয় আর্থিক সংকটের প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা। কলম্বোর অনেক রাস্তাই ছিল বিক্ষোভকারীদের দখলে। তারা বাস পুড়িয়েছে, পুলিশ ও দাঙ্গাবিরোধী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিক দেখলেই বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সংঘর্ষ ও পুলিশের হাতে একশজন আহত হয়েছেন। পরে চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন মাহিন্দ্র রাজাপাকসে।

গত কয়েকসপ্তাহ ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলন বর্তমানে চরম আকার ধারণ করায় কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছে৷ দেশটির রাজধানীতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেকে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন৷ সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের দুটো দাবির একটি পূরণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে৷ দ্বিতীয় দাবিটি হচ্ছে তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ৷

গত শুক্রবার অবশ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে৷ ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়া শ্রীলঙ্কায় এর আগে এত ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যায়নি৷

এদিকে, সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত৷ টুইটারে জুলি চাং লিখেছেন, আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের উপর আজকের সহিংস হামলার নিন্দা জানাই এবং এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই ৷ আমরা আজকের ঘটনায় আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং দ্বীপ রাষ্ট্রটির সবাইকে শান্ত হতে ও ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করছি৷

শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ গত কয়েকমাস ধরে বিদ্যুৎ, খাদ্য, জ্বালানি তেল এবং ঔষধের সংকটে ভুগছেন৷ এ অবস্থায় গত কয়েকসপ্তাহ ধরে অনেকটাই শান্তিপূর্ণ সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছিল দেশটিতে৷ কিন্তু সোমবার রাজাপাকসে সরকারের সমর্থক এবং বিরোধীরা সংঘর্ষে জড়ালে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে৷ সংঘর্ষে আহত ৭৮ জন কলম্বোর জাতীয় হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন৷

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.