সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কষ্ট পেয়েছি, আমদানি করা সরকার মানব না: ইমরান খান

পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল এবং অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ে কষ্ট পেলেও তা মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা কোনো সরকার মানবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেইসাথে আগামী রোববার (১০ এপ্রিল) সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশেরও ডাক দিয়েছেন ইমরান খান।

শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাতে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, ‘আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে আমি মর্মাহত। তবে আমি সুপ্রিম কোর্ট ও বিচারিক সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। তবে এ রায় দেওয়ার আগে পাকিস্তানে সরকার পতনে বিদেশিদের হুমকির চিঠির বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের অন্তত তদন্ত করে দেখার দরকার ছিল। আমরা সত্য বলছি কিনা তা যাচাই করে দেখতে সুপ্রিম কোর্ট অন্তত নথিটি দেখতে পারত কিংবা দেখার আদেশ দিতে পারত। আমি কিছুটা হতাশ হয়েছি। কারণ, এটি অনেক বড় একটি বিষয়। অথচ এটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কোনও আলোচনা হয়নি।’

নিজ দলের নেতাদের অর্থের বিনিময়ে কিনে নেওয়ার বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৩(এ)-এর সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করে ইমরান খান বলেন, ‘পাকিস্তানের যুব সমাজ হলো আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা যদি দেখে নেতারা তাদের বিবেক বিক্রি করে দিচ্ছেন, তাহলে তাদের সামনে আমরা কি শিক্ষা রেখে যাচ্ছি? এমনকি সংরক্ষিত আসনে যেসব ব্যক্তিকে এমপি বানানো হয়েছিল, তারাও অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন। এর বিরুদ্ধে জাতিকে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। যদি জাতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং দেশে অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর উন্নত না করে তাহলে কেউই তাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না।’

ইমরান তাকে সরিয়ে কোনও বিরোধীদলীয় সরকার মেনে নেবেন না বলেও জানিয়েছেন। তার কথায়, ‘আমি আমদানি করা কোনও সরকার মানব না।’ এর জন্য লড়তে প্রস্তুত জানিয়ে রোববার এশার নামাজের পর দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার ডাক দিয়েছেন তিনি।

হুমকিমূলক চিঠির বিষয়ে ইমরান খান বলেন, ‘এই চিঠি মিডিয়া বা পাবলিকের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। কারণ এটা কোড সম্বলিত। এই কোড প্রকাশ হলে পাকিস্তানের অনেক গোপন তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন কর্মকর্তার মধ্যে একটি মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে আমেরিকা অভিযোগ করে যে, ‘আমার রাশিয়া সফর করা উচিত হয়নি।’ অনাস্থা প্রস্তাব আনার আগেই ইমরান খান অভিযোগ করেন, মার্কিন ওই কর্মকর্তা পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করে বলেন, যদি ইমরান খান এই অনাস্থা প্রস্তাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন, তাহলে পাকিস্তানের সামনে ভয়াবহ পরিণতি আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা আগেই জানতেন যে, তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয়া হবে না। তারা আরও জানে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারলে পাকিস্তানে কে ক্ষমতায় আসবে।’

বিদেশিদের হুমকির চিঠি নিয়ে ইমরান আরও বলেন, পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজের সর্বোচ্চ নেতা নওয়াজ শরিফ ও তাঁর ভাই জাতীয় পরিষদের নেতা শাহবাজ শরিফ এ কেনাবেচা ৩০ বছর আগে থেকে শুরু করেন। এখনো সেটা বজায় রেখেছেন।

ভাষণে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরীফকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তিনি তো দৃশ্যত শপথ গ্রহণের জন্য তার শেরওয়ানি পর্যন্ত প্রস্তুত করে ফেলেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বিদেশি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।

এদিকে তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) নেতা ফয়সাল জাবেদ খান বলেছেন, ‘শনিবারের চ্যালেঞ্জ কীভাবে সামাল দিতে হবে, ইমরান খান সেটা ভালোই জানেন। বিরোধী দলগুলো ভেবেছে, তারা বোধহয় জিতে গেছে। আসলে তা নায়, তারাই হেরেছে।’ খবর- পার্সটুডের

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.