পুঁজিবাজারে আধুনিকায়ন করলেই হবে না, লেনদেনও বাড়াতে হবে: বিএসইসি কমিশনার

বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পুঁজিবাজারে শুধু আধুনিকায়ন করলেই হবে না, সেই সাথে লেনদেনও বাড়াতে হবে। কারণ লেনদেন বাড়ালে স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডারদের ভালো লভ্যাংশ দেওয়া যাবে এবং জিডিপিতে অবদানের পরিমাণ বেড়ে যাবে। বর্তমানে আমাদের পুঁজিবাজারে জিডিপিতে অবদান মাত্র ১৮ শতাংশ সেটাকে অন্যান্য দেশের মতো বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এডিবি ও বিশ্ব ব্যাংকের বেশ কিছু প্রকল্প হাতে রয়েছে।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে ডিএসইর নিকুঞ্জ ভবনে টেনিং একাডেমিতে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করেন৷

অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার বলেন, যদি পুঁজিবাজার তার প্রাথমিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে চায় সেক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প কিছু নেই। এ বিষয়টি প্রথম থেকেই আমরা সব সময় নজর রেখেছি। আজকের ওএমএস এবং এ ধরনের বিষয় আমরা সব সময় প্রচার করেছি। ‘ফিক্স সার্টিফিকেশন’ ব্যবস্থপনার মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওএমএস এর সাথে মিলিয়ে কাজ করবে। এই বিষয় অবশ্যই অনেক বড় প্রাপ্তি।

তিনি আরো বলেন, আমরা চাই পুঁজিবাজারে সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘন্টা লেনদেন হবে। বর্তমানে ব্যাংকিং লেনদেনের সময়ের উপর বাজারের লেনদেনের সময় নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে ব্যাংকিং কার্যক্রম শেষ হবার আরো আগে লেনদেন শেষ করতে হয়। যদি আমরা পুঁজিবাজারকে আরও আধুনিক করতে পারি তাহলে আমরা ২৪ ঘন্টা লেনদেন করতে পারব। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং সময় কোন বিষয়ে হবে না। সেই সঙ্গে শুধু দেশে নয় দেশের বাহিরে বসে লেনদেন করা যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে অনলাইন ও ডিজিটালভাবে বিও অ্যাকাউন্ট খোলা এবং দেশের বিভিন্ন জেলা, প্রান্তিক পর্যায়ে ও বিদেশে ডিজিটাল বুথ খোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত বেশ কিছু ডিজিটাল বুথ কার্যক্রম শুরু করেছে।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী দুবাই যাবেন। সেখানে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কি কাজ করা যায়, কিভাবে বিনিয়োগ নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ জানতে চেয়েছেন।

অনুষ্ঠানের ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, ডিএসই’র এই পথপরিক্রমায় আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। অনেক জানতে হবে, অনেক বুঝতে হবে। বিশ্বে ২০০ এর উপর দেশ রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ যে মানের দেশ তুলনামূলকভাবে সেই মান অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিজিটালাইজেশন এর মান অনেক ভাল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিগত এক বছরে অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। আমাদের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বেড়েছে, যা নিঃসন্দেহে উন্নয়নের নির্দেশক। কিন্তু সার্বিক পুঁজিবাজার নিয়ে গর্ব করার মত উচ্চতায় পৌঁছতে আরও সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন জিডিপির ২০% নীচে, ভারতে ৯০%। পাকিস্তান সব সূচকেই আমাদের চেয়ে পিছিয়ে। তবে তারা ইমার্জিং মার্কেটে আছে আর আমরা ফ্রন্টিয়ার মার্কেটে আছি, তাই আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে থাকলেও আর্থিক খাতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এই খাতের উন্নয়ন করতে না পারলে দেশের টেকসই উন্নয়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে তারা অত্যন্ত গতিশীল ও কর্মতৎপর, তারা নতুন নতুন প্রডাক্ট বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টার পাশাপাশি অনেক ভাল কাজ করছে। ডিএসই’র পক্ষ থেকেও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে একটি ভালো অবস্থান তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আধুনিক বিশ্বের অন্যান্য স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে তুলনীয় প্লাটফর্ম এখানে তৈরি হবে। নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও মানুষের মাঝে যদি আস্থা না থাকে তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আমাদের কথা এবং কাজের মধ্যে মিল থাকলে মানুষের আস্থা অর্জিত হবে। আমাদের রেগুলেটর ও যারা স্টেকহোল্ডার আছেন তাদের সহযোগিতা এবং ডিএসই’র প্রচেষ্টা সব মিলিয়ে অচিরেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে ফ্রন্টিয়ার থেকে ইমার্জিং মার্কেটের দিকে নিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেন।

ইউনুসুর রহমান আরও বলেন, আজ থেকে ২ বছর আগে ডিএসই’র বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন শুনেছিলাম ডিএসই ১০০% অটোমেটেড অর্গানাইজেশন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন থাকলেও সবক্ষেত্রে নেই। যেমন আমাদের ডাটা সেন্টার নাই, ডিআর সেন্টার নাই, ডিএসই’র মত প্রতিষ্ঠানে যা কাম্য নয়। তারপরও আমাদের বোর্ডের কাছে অগ্রাধিকার ছিল ডিএসইতে একটি ডিআর সুবিধা সম্বলিত ডাটা সেন্টার তৈরি করা। সেই কাজটি এগিয়ে যাচ্ছে এবং আশা করছি আগামী দেড় দুই মাসের মধ্যে আধুনিক ডাটা সেন্টার পাব এবং ডিআর সেন্টারও হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়েও আমরা ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ডিএসই’র আইসিটিতে দক্ষ লোকবল রয়েছে। তার সাথে বর্তমান এমডি যিনি আইটিতে দক্ষ, উনার তত্ত্বাবধানে ভবিষ্যতে ডিজিটালাইজেশনে আরও উন্নয়ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউল করিম, স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শাকিল রিজভী এবং ইউনাইটেড ফিনান্সিয়াল ট্রেডিং কোঃ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আওয়াল প্রমুখ৷

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.