মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে রেকর্ড

করোনা মহামারির বছর ২০২১ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের পাশাপাশি গ্রাহক সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার অনেক বেশি বেড়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের চেয়ে মোবাইলে ব্যাংকিংয়ের সহজলভ্যতা মানুষকে আকৃষ্ট করছে। এতে দিন-দিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের চেয়ে ২ লাখ ৮ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা বেশি। শতকরা হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। ২০২০ সাল শেষে লেনদেন হয়েছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা সহজ হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানান, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খুব সহজেই যে কেউ মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। একইসঙ্গে টাকা লেনদেন করতে পারেন বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে। দেশের মধ্যে অসংখ্য ব্যাংক এজেন্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় লেনদেনের জন্য গ্রাহকদের ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকদের সময় লাঘবের সঙ্গে যাতায়াত খরচও বাঁচে।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেছেন, এক বছরের ব্যবধানে এত বড় প্রবৃদ্ধি অন্য কোনো সেবা খাতে সচরাচর দেখা যায়নি। এর মধ্যে একক মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে গত মে মাসে, ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে। এসময় লেনদেন হয় ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।

বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে।

ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ও একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির এই সেবা উল্লিখিত হিসাবে এখনো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, লেনদেনের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাড়ছে এজেন্ট ও গ্রাহকের সংখ্যাও।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৯। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এমএফএস সেবায় গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার।

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। কেননা মোট গ্রাহকের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৬ কোটি ২৩ লাখ এবং শহরের গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ৯২ লাখ।

নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ৬ কোটি ৩০ লাখ এবং নারী গ্রাহক প্রায় ৫ কোটি। এক বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫৬১ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৮ জনে।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ, স্কুল-কলেজের বেতন, বীমার প্রিমিয়াম এবং মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে।

ডিসেম্বর মাসে এমএফএস সেবায় ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২০ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ২ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়। কেনাকাটার ৩ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার বিলও পরিশোধ হয় এ মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়।

এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

অর্থসূচক/ মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.