দেশের প্রথম মাল্টিমডাল টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে

চট্টগ্রাম বন্দরের স্টেডিয়ামের সম্মুখে কার অকশন শেডের পিছনে হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব পরিত্যক্ত জায়গায় মাল্টিমডাল কন্টেইনার টার্মিনালের কাজের পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

গতকাল শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মাল্টিমডাল কন্টেইনার টার্মিনালের প্রস্তাবিত জায়গা দেখেন এবং মাটি কেটে কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বেশ কিছু প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির পিতার পরিবারকে হত্যার পর সেই সব প্রদক্ষেপ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সব প্রদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেন। তারই আঙ্গিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের আয়ের উৎস বাড়ানোর প্রয়াসে রেলওয়ের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান কন্টেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) গঠন করেন।

সেই প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের পরিত্যক্ত জায়গা সমূহে আয়ের উৎস বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তারই আদলে এই পরিত্যক্ত জায়গায় পাবলিক পার্টনারশীপ হিসেবে সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স লিমিটেডের সাথে একটি মাল্টিমডাল কন্টেইনার টার্মিনাল প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

মন্ত্রী বলেন, এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর একটি প্রদক্ষেপ। উন্নত বিশ্বের রেলওয়ে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাদের দেশের রেলওয়েকে সরকার হতে ভর্তুকি দিয়ে চলতে হয়। এইভাবে যদি বাংলাদেশ রেলওয়ে নিজেদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কাজ সৃষ্টি করতে পারে তাহলে সরকারকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না। বরং বাংলাদেশ রেলওয়ে হবে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এখন বছরে ৩২ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে। আর সেই ৩২ লাখ টিইইউএস এর মাত্র ৫ শতাংশ কন্টেইনার বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যেমে ব্যবহার হয়। এই ৫ শতাংশ হতে ১০-১৫ শতাংশ কন্টেইনার বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যেমে ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে যেমন সড়ক পথের উপর চাপ কমবে, তেমনি বাংলাদেশে রেলওয়ের অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে।

এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কন্টেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল হোসেন উক্ত মাল্টিমডাল কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে বাংলাদেশ রেলওয়ের আর্থিক লাভ এবং সর্বোপরি দেশের রাজস্ব আদায়ে এই মাল্টিমডাল টার্মিনালের ভূমিকা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে সাইফ পাওয়ার গ্রুপের পরিচালক ও সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল সাইফ বলেন, এই টার্মিনাল হবে দেশের একমাত্র প্রথম পরিবেশবান্ধব মাল্টিমডাল গ্রীন কন্টেইনার টার্মিনাল। এই টার্মিনালের সাথে সড়কপথ, রেলপথ এবং সমুদ্রপথের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এই মাল্টিমডাল টার্মিনাল হবে সম্পূর্ণ গ্রীন টার্মিনাল। এখানে কোন জ্বালানি তেল অথবা ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি দ্বারা টার্মিনাল পরিচালিত হবে না। এখানে সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক ও সোলার ব্যবহার করে যন্ত্রপাতি পরিচালিত হবে। এ ছাড়া, এই মাল্টিমডাল কন্টেইনার টার্মিনালে উন্নত দেশের আধুনিক টার্মিনালের ন্যায় সকল
অপারেশানাল কাজ পরিচালিত করা হবে।

আধুনিক যন্ত্রপাতি, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি স্ক্যানার এবং আইএসপিএস এর সকল নিয়মকানুন মেনে এই টার্মিনাল পরিচালিত হবে। যা দেশের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া এই পরিবেশবান্ধব মাল্টিমডাল গ্রীন কন্টেইনার টার্মিনালে বছরে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হবে এবং ১ লক্ষ ২৫ হাজার টিইইউএস কনসুলেশান সেন্টার হবে। যা দেশের আমদানি-রফতানি খাতে বিশাল খরচ কমবে। তাছাড়া, দেশের রফতানি খাতে এই টার্মিনাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব), চট্টগ্রাম মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কন্টেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল হোসেন, সাইফ পাওয়ার গ্রুপের পরিচালক এবং সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল সাইফ ও সাইফ পাওয়ার গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.