পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে নীতিমালাসহ সরকারি সহায়তা চেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা

দেশে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব শিল্প কারাখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫৭টি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরির সার্টিফিকেটধারী। এর মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম ও ৯৪টি গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে। তবে সরকারি কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় তারা কাঁচামাল আমদানিসহ বিনিয়োগ ও নীতিগত বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। তাই সমস্যা মোকাবেলায় নীতিমালা তৈরিসহ বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও অংশীজনরা।

আজ রোববার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ শিল্পায়ন’ নিয়ে এক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানান তারা। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশে অবস্থিত সুইডিশ দূতাবাস এই সভার আয়োজন করে।

দেশে পরিবেশবান্ধব টেকসই ও জলবায়ু–নিরপেক্ষ অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকাশ ঘটাতে এক সঙ্গে কাজ করছে সিপিডি ও সুইডিশ দূতাবাস। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে এই সভার আয়োজন করে তারা।

আলোচনায় সরকারি নীতিনির্ধারক, শ্রমিক-মালিক পক্ষ, বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

সভায় বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দেশে এখন ১৫৭টি পরিবেশ বান্ধব বস্ত্র ও পোশাক কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম ও ৯৫টি গোল্ড ক্যাটাগরির। নিকট ভবিষ্যতে এই সেক্টরে আরো ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। অথচ পরিবেশবান্ধব কারাখানার বিষয়টি এখনো অবমূল্যায়িত হচ্ছে। পরিবেশের সুরক্ষায় তাই এই খাতে সরকারী বড় সহায়তা প্রয়োজন।

পরিবেশবান্ধব কারখানা নিয়ে সরকারের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, পরিবেশবান্ধব শিল্প নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা আছে।

শাশা ডেনিমস লিমিটেড এর এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কারখানা স্থাপনের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক (কেমিকেল) আনার ক্ষেত্রে সরকারী নিষেধাজ্ঞা আছে। এসব নিয়ে আমরা আবার বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে কোনো কাজ হয় না। এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে যেতে হয়। এই প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।

সরকারের কাছে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সুবিধার দাবি জানিয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সব ধরনের খরচ বেড়ে গেছে। এই বাড়তি দামের সঙ্গে পরিবেশ বান্ধব কারখানা স্থাপন করা অনেক উদ্যোক্তা তাল মেলাতে পারছেন না। তাই এই খাতে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সুবিধা সহ সরকারের আলাদা নীতি প্রয়োজন।

সভায় পরিবেশ বান্ধব শিল্প কারখানা স্থাপন নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সাবের হোসেন চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এই উদ্যোগ আমরা কেবল বস্ত্র ও পোশাক খাতে সীমাবদ্ধা রাখতে চাই না। অন্যান্য খাতেও পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হবে। সরকারী সহায়তার আশ্বাস দিয়ে সাবের হোসেন বলেন, আপনারা সবাই মিলে সব দাবির বিষয়ে একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ আমাদের কাছে দিন। আপনারা যদি আমাদের ও মন্ত্রণালয়কে বোঝাতে সক্ষম হন (কনভিন্স করতে পারেন) তাহলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এটা আমাদের দাবি হিসেবে উপস্থাপন করবো। এ বিষয় নিয়ে সরকার ও অন্যান্য অংশীজনদের এক সঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপসস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের অবস্থান আরও ভালো করতে হলে পরিবেশবান্ধব বা সবুজ কারখানার বিকল্প নেই। শ্রমিকের জীবনমানের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন এখন থেকেই সমন্বিত উদ্যোগ।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দেশের প্রধান রফতানি খাতটি ভালো করছে, রফতানিও বাড়ছে। তবে সামনের দিনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম পরিবেশ ইস্যু। এক্ষেত্রেও ভালো করতে হবে। রানা প্লাজা ধসের পর নানা ধরনের কমপ্লায়েন্স পূরণে সক্ষম হয়েছে খাতটি। ফলে পরিবেশ ইস্যুতেও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে নীতি সহায়তা ও অর্থনৈতিক সহায়ক পণ্যগুলো পর্যাপ্ত নয়। সবুজায়নের পথে কারখানা আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতার জন্য বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলোর সে সক্ষমতা নেই বললেই চলে। আবার দীর্ঘদিন ধরে পোশাক পণ্যের দাম না বাড়ায় খাতটির উদ্যোক্তারাও আর্থিকভাবে আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছেন না। কিন্তু পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে দরকার বড় বিনিয়োগ। তাই গ্রিন ফ্যাক্টরি নির্মাণে আগ্রহে ভাটা পড়ছে।

এসময় আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশে অবস্থিত সুইডিশ দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগী বিভাগের প্রধান ক্রিশ্চিনা জোহানসন, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.