র‍্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রসেস কালকে হবে না, সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাল্লাহ, আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছতে পারবো, আমার বিশ্বাস র‍্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাঙ্কশন তুলে নেবে।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত ও সরকারের লবিস্ট নিয়োগের প্রসঙ্গ নিয়ে এই বিবৃতি দেন।

র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমেরিকার সরকার র‍্যাবের এবং এর কতিপয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোন ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। র‍্যাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে আমাদের প্রতিপক্ষের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান আমেরিকার সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনাই প্রকাশ করেনি সেই সঙ্গে পৃথিবীর বড় বড় যেসব মানবাধিকার সংস্থা আছে তাদেরকেও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করছে- যে ‘র‌্যাব খুব খারাপ’ প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, র‌্যাব বাই অ্যান্ড লার্জ- জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে এরকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠান- যেটা দেশের সন্ত্রাস, মাদক বন্ধ করেছে। মানব পাচার মোটামুটিভাবে বন্ধ করেছে। আমেরিকার সরকারের পলিসি হচ্ছে টেরোরিজম, হিউম্যান ট্রাফিকিং ও ড্রাগ কমানো। র্যাব এই কাজগুলোই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে। এরকম একটা বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু লোকজন বিভিন্ন রকমের ভুল তথ্য দিয়ে এই স্যাঙ্কশনটা করিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের র‌্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে, তার জন্য তারা পৃথিবীর টেরোরিস্ট অর্গানাইশেন হিসেবে বিবেচিত হবে বরং টেরোরিস্টের বিরুদ্ধে তাদের কাজ। র‍্যাবের কারণেই হোলি আর্টিজানের পর থেকেই… স্বয়ং আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে- বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। হোলি আর্টিজানের পরে আর কোনো লোক সন্ত্রাসবাদে মারা যায়নি। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অবহিত করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, স্যাঙ্কশন দেওয়ার পর আমেরিকার সরকার আমাকে বিষয়টি জানান। জানার পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করি। আমার আলাপ অত্যন্ত পজিটিভ ছিলো। এই সব সমস্যা দূরীভূত করার জন্য, যদি কোনো অভিযোগ থাকে তা নিরসনের জন্য- আমাদের নাম্বার’স অব ডায়ালগ আছে। তিনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন সেগুলো করবেন।

মন্ত্রী জানান, আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। তাছাড়া রয়েছে ইকোনমিক পার্টনারশিপ। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাল্লাহ, আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছতে পারবো, আমার বিশ্বাস র‍্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাঙ্কশন তুলে নেবে। বিশ্বাস করি, এই নিষেধাজ্ঞা আমরা প্রত্যাহার করাতে পারবো।

শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে র‍্যাবকে বাদ দিতে কতিপয় এনজিও’র চিঠির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১২টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা ও অনুমান এখানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা বলেছেন- বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভায়োলেট করছে।

তাদের ভাষায় বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে নিযুক্ত আছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এজন্য তারা বাংলাদেশের র‍্যাবকে পিস কিপিংয়ে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তারা গত নভেম্বরের ৮ তারিখে চিঠি দিয়েছেন। দুইমাস হলো ইউএন এটা পেয়েছে। এ বিষয়ে ইউএন’র স্পোক পার্সন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতিসংঘ যখনই কাউকে পিস কিপিংয়ে নেয়, তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করে কাজটি দেয়।

সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উদ্দেশে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস এইসব অপপ্রচারণা এবং দুরভিসন্ধিমূলক কাজ যেটা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে।ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, র্যাব তো একটা ভালো প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে ডিমরালাইজ করার জন্য এই অপচেষ্টা যারা করছে, আমি বিশ্বাস করি তারাই এজন্য দুঃখিত হবেন। এ রকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য যারা যে উদ্যোগ নিয়েছে এজন্য তারা লজ্জিত হবেন।

এই সময় দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের অমঙ্গল ডেকে আনে নিজেদের এমন ন্যারো অ্যাম্বিশান পরিত্যাগ করা উচিত। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানের কাছে, প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে তারা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তারা এও বলেছেন বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.