নতুন উচ্চতায় রফতানি আয়

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে পণ্য রফতানি করে ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এর আগে একক কোনো মাসে এত বেশি রফতানি আয় আসেনি। রফতানি আয়ের এই নতুন রেকর্ডে বরাবরের মতোই প্রধান ভুমিকা রেখেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। এর আগে একক মাসে সর্বোচ্চ আয় এসেছিল গত অক্টোবরে, ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।

আজ রোববার (২ জানুয়ারি) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রফতানি আয়ের এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

করোনার ধাক্কা সামলে তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়তই আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের রফতানি আয়। তবে, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বেও অধিকাংশ দেশে করোনার নতুন ধরণ অমিক্রণের সংক্রমণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। যা তৈরি পোশাক খাতের রফতানির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসতে পারে।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে দুই হাজার ৪৭০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪৭ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। এদিকে, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। তবে, অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি হয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

ইপিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক, বিশেষত, নিটওয়্যার পণ্য রফতানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণে সার্বিকভাবে পণ্য রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এর মধ্যে, মোট রফতানি আয়ের মধ্যে ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১ হাজার ১৬৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৮৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আয় বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এদিকে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের রফতানির তুলনায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে পোশাক রফতানি ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে ২০১৯ এর ডিসেম্বরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির পরিমাণ হয়েছে ৩৮ শতাংশ। ২০২১ এর ডিসেম্বর মাসে ৪০৪ কোটি ডলার সমমূল্যের পোশাক রফতানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পোশাক রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৯০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮.০২ শতাংশ বেশি।

ডিসেম্বর মাসে নিটওয়্যার পণ্য রফতানিতে ৫৬.৫৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রফতানি ৪৮.১৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সব পণ্যের রফতানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

রফতানি উপাত্ত অনুযায়ী পোশাক খাতের রফতানির ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল, পণ্য জাহাজিকরণ খরচ, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাজার অনেক চড়া। কিন্তু পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ার অনুপাতে পোশাকের দাম সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাড়ছে না। এছাড়া আমাদের পোশাক রফতানির প্রধান বাজারগুলোতে কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রণের সংক্রমণও বাড়ছে। এর ফলে তৈরি পোশাক খাত নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্লাস্টিক পণ্য রফতানি আয় বেড়েছে ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। ছয় মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময় চামড়া খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ এবং আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।

তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে। ডিসেম্বর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতারি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫৯ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.