‘সঠিক নীতি-সহায়তার অভাবে অধিকাংশ মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে’

স্বাধীনতার পর দীর্ঘযাত্রায় এগিয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। তারপরেও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে রয়েছে অধিকাংশ মানুষ। কারণ, ব্যাংক খাত শুধু অর্থের যোগান দেয় না, আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আর্থিক খাত সম্প্রসারণে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তবে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। সঠিক নীতি-সহায়তার অভাবেই দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এখনো আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে রয়ে গেছে।

আজ মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: প্রয়োজনীয়তা ও চর্চা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বিশ্লেষকেরা।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়। ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, গবেষণা পরিচালক ড.আব্দুর রাজ্জাক ও পরিচালক ড. বজলুল এইচ খন্দকার।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে লেনদেনের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ঝুঁকির পরিমাণও। আর তাই গ্রাহকদের অর্থ বা আমানতের সুরক্ষার দিতে আরো কঠোর নীতিমালা ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এই খাতে কোনো সংকট তৈরি হলে, তা অর্ন্তভূক্তিমূলক অর্থনীতির উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করবে। সঠিক নীতি-সহায়তার অভাবে লোকসান করছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাংলাদেশের উন্নয়নে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের ভূমিকা শীর্ষক প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকরণ কতটা জরুরি তা আমরা করোনায় উপলব্ধি করেছি। প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে চেয়ে তা পুরোপুরি পারেননি আর্থিক অন্তর্ভূক্তি না থাকার কারণে। সরকারি তথ্যভান্ডারের দুর্বলতার কারণে মানুষকে এ সেবার মধ্যে আনা যায়নি।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বিস্তার ঘটলে তাতে নীতি সহায়তার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকাশের মাধ্যমে আমরা এখন টাকা পাঠানো, কেনাকাটা, হাসপাতালের বিল, বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ সরকারি সব পরিষেবার বিল ও বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে পারছি। তবে বিকাশের মতো আর কেউ পারছে না। নগদ কিছুটা করলেও এখনো তাকে লাইসেন্স দেয়া যায়নি। মানুষ বিশ্বাসহীনতায় ভুগছে।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত করে বিকাশ। বর্তমানে ১০ কোটির বেশি মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে বিকাশের মতো ১৬টি প্রতিষ্ঠান। তবে সেবা সহজতর না হওয়ায় বিপুল সুযোগ থাকার পরও তা এগোচ্ছে না। অন্যদিকে সঠিক নীতি-সহায়তার অভাবে লোকসান করছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারী সহায়তা পেলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত করে শতভাগ মানুষকে আর্থিক অন্তভূক্তিকরণের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকারের নীতি সহায়তা নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমও শুরু করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকাশ সিটি ব্যাংকের সহায়তায় ক্ষুদ্র ঋণ চালু করেছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্র সংস্থাগুলোর উ্চচহারের ঋণ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।

‘সামাজিক সুরক্ষা ও ব্যক্তি পর্যায়ে সরকারের অর্থ বিতরণের মাধ্যমে আর্থিক অন্তভূক্তিকরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকার বাজেটের মাধ্যমে ২৮ হাজার কোটি টাকা সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় করেন। এ অর্থ ব্যাংকিং চ্যালেনে বিতরণ হলে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি বাড়বে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা সবখাতেই গর্ব করার মতো সফলতা পেয়েছি। তবে বৈষম্য বেড়েছে।

ইআইইউ গ্লোবাল মাইক্রোস্কো ফিন্যান্স রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী, সামগ্রিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ৪৪ তম বলে আরেকটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন ড. বজলুল এইচ খোন্দকার।

‘জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল: মূল সমস্যা এবং বাস্তবায়ন’শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূর করার জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের উচিত ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং সেবার আওতায় দরিদ্র ও নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায় বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত আইনের আলোকে কাজ করেন। নতুন করে ইনোভেশন খুব কম হয়। তবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সহজতর করছি। এজেন্ট ব্যাংকিং ও ব্যাংকের উপশাখা বাড়াচ্ছি।

তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে পিছিয়ে থাকার পেছনে আমাদের দেশের মানুষের মেন্টালিটিও একটি কারণ। আমাদের মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় করেন। অনেক দেশে এটি ২৮ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.