বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়াকে খুঁজছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা ও আসামিদের গ্রেফতারে র্যাবই প্রথম কাজ করে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের বিচার নিশ্চিত করতে সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ করেছে। মেজর জিয়ার খোঁজ করতে বিভিন্নভাবে কাজ করছে র্যাব। সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত এ আসামি দেশে কিংবা দেশের বাইরে যেখানেই গা-ঢাকা দিক না কেন, তাকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের একাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এই সংগঠনের সঙ্গে মেজর জিয়ার সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। এর সূত্র ধরেও তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে র্যাব।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এরআগে বিভিন্ন সময় তথ্য ছিল মেজর জিয়া দেশে আছে, পরবর্তীতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। আমাদের সন্দেহ, সে এখন দেশের বাইরে রয়েছে। মেজর জিয়াকে গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি চলমান। এ বিষয়ে র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। দেশের বাইরে থাকলেও তাকে খুঁজে বের করে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে, দেশে থাকলে খোঁজ পাওয়ামাত্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ওই বছরের ৬ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ মামলায় ২৮ জন সাক্ষীকে বিভিন্ন সময়ে আদালতে হাজির করা হয়।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ হত্যা মামলায় পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন- মেজর (বরখাস্ত হওয়া) সৈয়দ জিয়াউল হক, জঙ্গিনেতা আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ও আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম। তাদের মধ্যে জিয়াউল ও আকরাম পলাতক। এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত একমাত্র আসামি শফিউর রহমান ফারাবী আছেন কারাগারে।
অর্ধযুগেরও বেশি সময় আগে অভিজিৎ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াকে গ্রেফতার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে কয়েকবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার সন্ধান পায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা এখনো সফল হয়নি। তবে জিয়াউল হক এখন ‘দেশে নেই’ বলে গতকাল মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ওই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য আছে, তারা (জিয়া ও আকরাম) দেশে নেই। তারা অন্য দেশে গা-ঢাকা দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের ধরে এনে রায় কার্যকর করা হবে। এজন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, জিয়াউল হক জিয়াসহ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা এখনো বাংলাদেশেই রয়েছে। এই দুজনের সন্ধান চেয়ে গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর) ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণার সময় এ ধারণা ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীন রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস (আরএফজে)।
সৈয়দ জিয়াউল হক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান বলে তথ্যপ্রমাণ থাকার কথা বলে আসছে পুলিশ। এই জঙ্গি সংগঠনটির আল-কায়দার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে বলেও বলা হয়ে থাকে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) আধ্যাত্মিক নেতা জসীমুদ্দিন রাহমানীকে গ্রেফতারের পর জিয়াউল হকের উগ্রপন্থায় সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, ব্লগার, প্রকাশক, মুক্তমনা লেখকসহ অন্তত নয়জনকে টার্গেট করে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত এই সেনা কর্মকর্তা।
অর্থসূচক/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.