শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি

নিরাপদ সড়ক চেয়ে ১১ দফা দাবি ও প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন শিক্ষার্থীরা। দ্রুত এই দাবি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন তারা। তা না হলে ছাত্রসমাজ কোনও অন্যায় সহ্য করবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় শিক্ষার্থীরা এই ১১ দফা দাবি, প্রস্তাবনা ও সড়ক নীতিমালা উত্থাপন করেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে সোহাগী সায়মা নামে একজন এই দাবি উত্থাপন করেন।

সোহাগী সায়মা বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছোট বা বড় পরিসরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের একটি দাবিও পূরণ করা হয়নি। তাই আমরা এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবো। আমরা এ দেশেরই সন্তান। এ দেশে কখনও কোনও অন্যায়কে ছাত্ররা মাথা পেতে নেয়নি। দেশ ও জনগণের জন্য ছাত্ররা সবসময় নিবেদিত প্রাণ ছিল। বৃটিশবিরোধী থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারাই বৃহত্তর আন্দোলন করেছে। এ দেশের ছাত্ররা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। আমরা সেই মাটিরই সন্তান। যে দেশে ৩০ লাখ শহীদ শুয়ে আছে, প্রীতিলতা জন্মেছে; সেই দেশে ময়লার গাড়ির নিচে পড়ে ছাত্ররা মারা যাবে তা মেনে নেবো না, সহ্য করবো না।’

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেকেই বলতে চান, ২০১৮ সালের আন্দোলন নাকি একটি ব্যর্থ আন্দোলন। আমরা বলতে চাই, ব্যর্থতো তারাই হয়, যারা হাল ছেড়ে দেয়। আমরা তো হাল ছেড়ে দেইনি। আমরা হাল ছাড়বো না। ব্যর্থ বলে কোনও শব্দ ছাত্রদের ডিকসনারিতে থাকতে পারে না। যারা এ দেশে সন্ত্রাসী কায়েম করতে চায়, তারাই এই আন্দোলনকে ব্যর্থ করতে চায়।’ তিনি শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি উত্থাপণ করেন। যা সোহাগী সায়মার ভাষায় সড়ক নীতিমালাও।

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা

১. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নাঈম হাসান ও মাইনুদ্দীন ইসলাম দুর্জয়ের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

২. সারাদেশের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফভাড়া নিশ্চিত করতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ জন্য দিন রাত বা ছুটির দিনসহ কোনও শর্ত জুড়ে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসি’র বাস বাড়াতে হবে।

৩. সব ধরনের পরিবহনে নারীদের অবাধ যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সঙ্গে সৌজন্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস কার্যক্রম ও লাইসেন্স দানে বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকার ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. সব সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

৬. সব রুটে প্রতিযোগিতা বন্ধে এক গ্রুপ বা কোম্পানির মাধ্যমে সব বাস চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাস অনুযায়ী মালিকদের মধ্যে লাভের টাকা বন্টনের নিয়ম করতে হবে।

৭. শ্রমিকের নিয়োগপত্রে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। বাস চালক ও হেলপারদের চুক্তির পরিবর্তে সব গণপরিবহন টিকিট পদ্ধতিতে চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. গাড়ি ও চালকের কর্মঘণ্টা এক নাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি হতে পারবে না। বাসে দুজন চালক ও দুজন সহকারী থাকতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল তৈরি করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাক ও ময়লার গাড়ি চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নির্ধারণ করতে হবে।

১১. মাদক প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

যে চালকদের দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটে, তার জন্য কেবল চালকরা দায়ী নয়। তাদের পর্যাপ্ত মজুরি দেওয়া হয় না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া হয় না। আমাদের দেশের চালকরা ১০-১২ ঘণ্টা গাড়ি চালায়। একটি মানুষ রোবট না হলে তাকে দিয়ে এত সময় গাড়ি চালানো সম্ভব না।’

১১ দফা ঘোষণার পর এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘একজন শ্রমিক আমাদের জীবনকে বহন করে নিয়ে যায়। একটি বাসের ৫০-৬০ জন যাত্রীকে যিনি বহন করে নিয়ে যান, তিনি যদি খেতে না পারেন, চিকিৎসা না পান, ঘুমতে না পারেন; তাহলে তিনি তো অসুস্থ চালক হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমরা ছাত্ররা তাদের সুস্থ জীবন এবং সুন্দর জীবনের দাবি জানাচ্ছি। এ জন্যই আমরা আন্দোলন করছি।’

ছবি: রওনক মাহামুদ সৌরভ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.