ডলারের বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে টাকা

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। আমদানি ব্যয়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে করোনার টিকা। অন্যদিকে টানা চার মাস ধরে কমছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রফতানি আয়ে রেকর্ড হলেও আমদানির তুলনায় অনেক কম। সব মিলিয়ে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে অবমূল্যায়ন হচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। আজ মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দাম বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সা। খোলাবাজারে তা আরও বেশি, যা প্রতি ডলার ৮৯ টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডলার বিক্রি করছে। এরপরও দাম ধরে রাখা যাচ্ছে না। এদিকে, মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন রোধ এবং অনলাইনে ডলার কেনা-বেচা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর আজ মঙ্গলবার নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য মূলত মার্কিন মুদ্রা ডলার ব্যবস্থায় করা হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ডলারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ২০০৬ সালে ১ ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৭০ টাকা। অপরদিকে ২০২১ সালের অক্টোবরে ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫.৬০ টাকা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ৮৮ টাকা দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে।

আইনি নোটিশে বলা হয়, মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়ন রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার জন্য দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন রোধ এবং অনলাইনে ডলার কেনা-বেচা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ব্যাংকারদের মতে, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, করোনার কারণে অনেক আমদানি বিল যে বিলম্বে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, এতে একসঙ্গে অনেক আমদানি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে রফতানি যা হচ্ছে, তার আয় প্রত্যাবাসনে বাড়তি সময় দেওয়া আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় মানুষ বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেছে। এসব কারণে ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। বৈশ্বিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের উপার চাপ বাড়ছে। ফলে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে আশংকা করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, ‘আমদানি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি পরিবহণ খরচও অনেক বেড়েছে। আমদানি ব্যয়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে করোনার টিকা। সব মিলিয়ে ডলারের উপর চাপ বাড়ছে। তবে সে তুলনায় রফতানি বাড়ছে না, প্রবাসী আয়ও কমতির দিকে। এ জন্য ডলারের দাম বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে যেসব ব্যাংক ডলার বিক্রি করতো, তারাই এখন কেনার জন্য আসছে। তাদের সতর্ক করা হয়েছে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেরও করোনা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। ফলে মুলধনী যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া দীর্ঘদিনের বকেয়া আমদানি বিলও এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে ডলারের উপর চাপ বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখনো ৪৬ বিলিয়ন ডলারের উপরে রয়েছে। এছাড়া বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন মতো ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজও ৬ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

তিনি আরো বলেন, ‘ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোনো ব্যাংক কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।’

জানা গেছে, গত বছরের করোনা শুরুর পর টাকার বিপরীতে ডলারের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর আমদানি বিল পরিশোধে বাড়তি সময় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। রফতানির অর্থ ফেরত আনতেও দেওয়া হয় বাড়তি সময়। এসব সুবিধা এখনো বহাল আছে। এদিকে সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। আয় কমার প্রবণতা এখনো আছে। আর গত আগস্টে আমদানিতে রেকর্ড হয়। এক মাসে ৬৫৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণপত্র খোলা বাড়ে ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ঋণপত্র নিষ্পত্তি বাড়ে ৪৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.