ফেসবুক বিতর্ক এবার মার্কিন সিনেটে

ফেসবুক ক্ষতি করছে সমাজের। মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরিতে ইন্ধন দিচ্ছে। ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে মানুষে কাছে। এমন পরিস্থিতি যে তৈরি হবে, অনেক আগেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা জানতেন। কিন্তু পপুলার হওয়ার ঝোঁকে তারা এই বিষয়গুলোকে আমল দেয়নি। গত রোববার ফেসবুকের বিরুদ্ধে এমনই বোমা ফাটিয়েছিলেন ফ্রান্সেস হাউগেন। ফ্রান্সেস একসময় ফেসবুক সংস্থায় ডাটা বিজ্ঞানীর কাজ করতেন।

তার দাবি, সে সময়ের বহু গোপন নথি তিনি দেখেছেন। ফেসবুকের প্রভাব সমাজের উপর কীভাবে পড়তে পারে, তার স্পষ্ট সতর্কবার্তা ছিল ওইসব নথিতে। কিন্তু ফেসবুক কখনোই তা আমল দেয়নি।

এক টেলিভিশন চ্যানেলের প্রাইমটাইম শোয়ে এই অভিযোগগুলি সামনে আনেন ফ্রান্সেস। এরপর মঙ্গলবার মার্কিন সিনেট তাকে ডেকে পাঠায়। সিনেটের সামনে অন রেকর্ড ফের তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। কংগ্রেস এবং সিনেটের সদস্যরা তা শোনেন।

ফেসবুকের সাবেক ডাটা বিজ্ঞানীর বক্তব্য, আলগোরিথমস কীভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে, এ বিষয়ে বহু আগেই সতর্ক করা হয়েছিল ফেসবুককে। ফেসবুককে ব্যবহার করে কীভাবে কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী বিভেদ এবং বিদ্বেষের বিষ ছড়াতে পারে, সে বিষয়েও রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তারা তা আমলে নেননি। জাকারবার্গ থেকে শুরু করে ফেসবুকের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা কেবল একটিই বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেছিলেন। কীভাবে পপুলারিটি বাড়ানো যায়। এবং তা করতে গিয়ে সমাজের কথা তারা ভুলে গেছিলেন।

ফ্রান্সেসের অভিযোগ, ফেসবুক ছোটদের ব্যাপক ক্ষতি করছে। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ছোটদের নেশায় পরিণত হচ্ছে। যেভাবে ছোটবেলায় না বুঝে ছোটরা সিগারেটের নেশায় ডুবে যায়। পরে ছাড়তে চাইলেও ছাড়তে পারে না, তেমনই ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে নেশা হয়ে যাচ্ছে যুবসমাজের। আর এটাই চান ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী জেনারেশনের মধ্যেও তারা এভাবেই ফেসবুকের নেশা ঢুকিয়ে দিতে চাইছে। তাই ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার বয়স অন্তত ১৩ থেকে বাড়িয়ে ১৬ বা ১৮ করা উচিত।

সাধারণত, মার্কিন সিনেটে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা কোনো বিষয়েই একমত হন না। কিন্তু এদিনে ফ্রান্সেসের কথা শোনার পর তারা কার্যত একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। দুই তরফেরই বক্তব্য, ফ্রান্সেসের কথাগুলো যুক্তিপূর্ণ। এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত এবং যোগযোগমাধ্যমগুলো কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা দেখা দরকার।

অবশ্য সিনেটে এই সভা হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে একটি ব্লগ লেখেন ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। ফ্রান্সেসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, কিছু যুক্তিহীন কথা বলেছেন ওই নারী। ফেসবুককে কলঙ্কিত করতেই এ কাজ তিনি করেছেন। তার প্রতিটি বক্তব্যকে খণ্ডন করা সম্ভব। সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.