শিক্ষার্থীদের চুল কাটায় বরখাস্ত সেই শিক্ষক, বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ায় শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১৬তম বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের চুল কর্তন করে লাঞ্চিত করার অভিযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অস্থিরতা নিরসনে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ফারহানা ইয়াসমিনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সেই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা আসে।

এ বিষয়ে রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের শিক্ষক ইয়াসমিন বাতেন মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক আব্দুল লতিফ। সভায় সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব-৩ সৈয়দা নওয়ারা জাহান এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলী।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।

সেই সঙ্গে ১৪ শিক্ষার্থীকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তাও জানতে চায় আদালত।

এ সংক্রান্ত এক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মুজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

একই সঙ্গে সারাদেশে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে একটি গাইড লাইন তৈরিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবেনা তাও জানতে চায় হাইকোর্ট। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনাটি বুধবার হাইকোর্টের নজরে আনেন এ আইনজীবী। আদালত তখন তাকে রিট করতে বলেন। এরপর তিনি রিট দায়ের করলে বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেয়।

ভুক্তভোগী ছাত্ররা জানান, গত রোববার দুপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত ছিল।

পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার সময় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন আগে থেকে কাঁচি হাতে হলের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের মাথার সামনের অংশের বেশ কিছু চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এতে ছাত্ররা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ভাইরাল হয়। এর মধ্যে গত সোমবার রাতে দ্বারিয়াপুরের শাহমুখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষের দরজা বন্ধ করে এক ছাত্র ৩৫টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক আদেশে আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে ইউজিসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঘটনাটিকে উদ্বেগজনক আখ্যায়িত করে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.