দুই কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ কোম্পানি, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড এবং বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফেক্চারিং কো. লিমিটেড পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে। ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) থেকে মূল বাজারে ফেরা কোম্পানি ২টির শেয়ার সংখ্যা রাতারাতি ৩ গুণ হয়েছে। শেয়ার বৃদ্ধির এই তথ্য গোপন রাখার দায় নিচ্ছেন না কেউ। মধ্য থেকে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির কিছু মৌলিক তথ্য প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এসব তথ্যের মধ্যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার সংখ্যা, উদ্যোক্তাদের ধারণকৃত শেয়ার সংখ্যা, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারণকৃত শেয়ার সংখ্যা ইত্যাদি তথ্যও থাকে। বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী কোম্পানির আর্থিক তথ্যাবলীর পাশাপাশি এর শেয়ার সংখ্যা, বিশেষ করে ফ্রি ফ্লোট শেয়ার (যে শেয়ার যে কোনো সময় কেনা-বেচা হতে পারে) এর সংখ্যাও বিবেচনায় নিয়ে থাকেন। কারণ চাহিদা ও যোগানের সূত্র অনুসারে, শেয়ারের মূল্যের উপর এর সংখ্যারও প্রভাব থাকে।

আলোচিত ২ কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা নিয়ে তেলেসমাতি ঘটে গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার কোম্পানি ২টির শেয়ারের যে সংখ্যা উল্লেখ করা ছিল, রোববার রাতারাতি তার তিনগুণ উল্লেখ করা হয়েছে।

ডিএসইর পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফেক্চারিং কো. লিমিটেড পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩ কোটি ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৪৮ হাজার ৩২০টি। কোম্পানিটির ২০১৯০২০ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনেও একই তথ্য উল্লেখ করা আছে। কিন্তু রোববার ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির মূলধন উল্লেখ করা হয় ৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা দেখানো হয় ৯৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৫টি, যা বৃহস্পতিবার উল্লেখ করা মোট শেয়ারের দ্বিগুণ।

হঠাৎ করে শেয়ার সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় রোববার ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ কমে যায়। সার্কিটব্রেকার না থাকলে হয়তো এটি আরও কমে যেতে পারতো। কারণ দিনভর কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রির অনেকগুলো প্রস্তাব থাকলেও ক্রয়-প্রস্তাব ছিল না বললেই হয়। বরং এক পর্যায়ে এর শেয়ারের ক্রেতা উধাও হয়ে যায়।

অপর কোম্পানি পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার। রোববার মূলধন দেখানো হয় ১০ কোটি ৪৫ লাখ। আর শেয়ার সংখ্যা বেড়ে হয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৯৬ হাজার। রোববার এই কোম্পানির শেয়ারও ১০ শতাংশ দর হারিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, শেয়ার সংখ্যা নিয়ে কোম্পানি ও ডিএসইর তোঘলকি কাণ্ডের মাশুল দিতে হচ্ছে তাদেরকে। তাদের অভিযোগ, শেয়ার সংখ্যার উল্লেখ নিয়ে কোম্পানি ও ডিএসইর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা যোগসাজশের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করেছেন। ওটিসি থেকে ফেরার পর ডিএসইর ওয়েবসাইটে শেয়ারের প্রকৃত সংখ্যার উল্লেখ থাকলে অথবা কিছু পেন্ডিং শেয়ার কোম্পানির শেয়ার সংখ্যার সাথে যোগ হতে পারে এমন কোনো নোট থাকলে তারা সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু এসব বিষয়ে তাদেরকে অন্ধকারে রাখায় তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে ভুল ফল আসছে। তারা ৩০ লাখ শেয়ার ধরে নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। এখন শেয়ার সংখ্যা কোটির উপরে দেখানোয় শেয়ারের দামে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

আলোচিত ২টি কোম্পানি-ই বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের (বিডিজি) প্রতিষ্ঠান। দুটি কোম্পানিরই কোম্পানি সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ারের তথ্য আড়াল করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, কোম্পানি ২টি ২০১৮ সালে ২০০% বোনাস ঘোষণা করেছিল, যা তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন পায়। কিন্তু বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে, তাদের অনুমোদন ছাড়া ওটিসির কোনো কোম্পানির বোনাসের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায় না। তাই মূল মার্কেটে ফেরার সময় ওই বোনাসের আলোকে শেয়ার সংখ্যা দেখানো যায়নি। সম্প্রতি বিএসইসি তাদের বোনাস অনুমোদন করায় এই তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, শেয়ার তথ্য সংক্রান্ত এই বিভ্রান্তির দায় তাদের নয়, কোম্পানির। কোম্পানি যে তথ্য উল্লেখ করে তাদেরকে জানায়, তারা ওয়েবসাইটে সে তথ্য-ই প্রকাশ করেন।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা বিষয়টির তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.