দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক সাংবাদিকদের

সাংবাদিক সংগঠনের নির্বাচিত ১১ নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) চিঠি দেওয়ার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে সাংবাদিক সমাজ।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে দুপুর ১টার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশ থেকে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, ‘সংগঠন ও রাজনৈতিক মতকে সামনে রেখে যেভাবে হিসাব চাওয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। আমরা রাষ্ট্রের কাছে এর ব্যাখ্যা চাই। এর নিরসন চাই। উৎকণ্ঠা দূর করতে হবে। আমরা মনে করি, গণমাধ্যম ও সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতেই এটা করা হয়েছে। সন্তোষজনক সমাধান না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবসহ দেশ জুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে।’

প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘একটি গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। সাংবাদিকদের রাস্তায় দাঁড়ানোর কথা নয়। কিন্তু আজ তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে, একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে বিশ্বে। বিষয়টি আমরা সরকারকে খোঁজে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের অভিযোগগুলো সুস্পষ্ট জানাতে হবে। আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার অধিকার আপনাদেরকে দেওয়া হয়নি। নানাভাবে আমাদের চরিত্র ক্ষুণ্নের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই চিঠি ইস্যু হওয়ার আগে আপনার কাছে গেছে। আপনি কি এটা দেখেননি?’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাওভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ উদ্দেশ্যমূলক বলে আমরা মনে করি। নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতা পেশাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’

সমাবেশে শুরুর দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে অনেক সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। কিন্তু অনেক পেশাজীবী সংগঠনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। রাগটা হয়তো সেখানেই, তারাই কেন স্পষ্ট নির্বাচনে বারবার নির্বাচিত হয়। সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব তলবের এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্য পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে কেন এসব নোটিশ দেওয়া হয় না? শুধু রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপরে? আমার ধারণা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য এটা করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করব।’

যেসব নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে- জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইজে) সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইজে) সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান ও এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।

এর আগে গতকাল (শনিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে এবং ডিআরইউ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আজকের এই সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি-সম্পাদকসহ ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করে গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ। চিঠিতে সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য (অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, কবে খোলা হয়েছে, জমা, উত্তোলনসহ লেনদেন বিবরণী, অ্যাকাউন্টের স্থিতি) আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নম্বর দেওয়া হয়েছে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.