৪৪ বছরে বিএনপি

এক যুগের দেশ শাসন, টানা এক যুগেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে। দুই দফা আন্দোলনে ব্যর্থতা, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব এবং দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা। এমন বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠার ৪৩তম বছরে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ১ সেপ্টেম্বর। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধ সামনে রেখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই দল গঠন করেন। বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। তার প্রায় বছর তিনেক পর নিজের গড়া জাগো দলের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ৭৮ সালের এদিনে আত্মপ্রকাশ ঘটান জাতীয়তাবাদী দলের। ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলা দলটি পরের বছর জয়ী হয় সংসদ নির্বাচনে। ডান, বাম ও মধ্যপন্থিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিএনপি পায় শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তি।

১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী একদল সেনাসদস্যের হাতে জিয়াউর রহমান শহীদ হলে তাঁর সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়া আসেন নেতৃত্বে। তাঁর হাত ধরে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে দলটি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার কঠিন বাস্তবতায় পড়তে হয় বিএনপিকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দল বিএনপি। তবে তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি এবং ছয়টি আসনে জয় লাভ করে। সংরক্ষিত একটি আসনসহ সাতটি আসন নিয়ে একাদশ সংসদে যোগদান করলেও নেই প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায়।

প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সময় বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দল। কারণ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে টানা দুইবার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলা ও হামলায় বিপর্যস্ত। চলমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না তারা। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত এ দলটিকে। চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতা এবং দুইবার বিরোধী দলে থাকা বিএনপি শহীদ জিয়ার আদর্শ অনুসরণ করেই চলমান বৈরি অবস্থা মোকাবিলা করবে বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।

গত বছরের মতো এবারও বাসায় থাকলেও অসুস্থতা ও শর্ত সাপেক্ষে জামিনে থাকায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপস্থিত থাকতে পারছেন না দলীয় চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে থাকছেন না বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। দলের শীর্ষ দুই নেতা ছাড়াই ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দলটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি দেশ ও মানুষের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। এর ওপর করোনা মহামারির আক্রমণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের মানুষ। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টায় মরিয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন-খারাপি, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে হয়রানির খড়গ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া প্রতিহিংসার শিকার। কারণ তিনিই গণতন্ত্রের প্রতীক এবং জনগণের নাগরিক ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে প্রধান কণ্ঠস্বর। পাশাপাশি দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যখন এই দেশের জনগণ দৃঢ়ভাবে অনুভব করেছিল যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত হতে হবে, এমন একটি দেশ যা একটি গণতান্ত্রিক জাতি গঠনের একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে। আর বিএনপি দলটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে যা জাতি, ধর্ম এবং শ্রেণি নির্বিশেষে সবাইকে গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপির সেই আবেদন আজ পর্যন্ত বহাল আছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ আজ পর্যন্ত বিএনপিকে উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দেখে।

৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি- বুধবার সকাল ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের কবরে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, হেল্প ক্যাম্প ও করোনা রোগীদের সহায়তা প্রদান, দেশব্যাপী পোস্টার এবং ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে একইভাবে আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.