শাক বিক্রি করে স্বামীর ওষুধ খরচ ও সংসার চলে সাধন বালার

জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর থেকে: সাধন বালা, বয়স প্রায় ৬০ বছরের কাছাকাছি। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া বয়স ৫০ এর নীচে। স্বামী নন্দলাল দেবনাথ অসুস্থ, তার বয়সও প্রায় ৬৫ বছর। কোন সন্তান নেই তাদের সংসারে। তাই অসুস্থ স্বামীর ওষুধ খরচ ও নিজেদের সংসার চালানোর দায়িত্ব এই বৃদ্ধা সাধন বালার কাঁধে। প্রতিদিন পরিত্যক্ত স্থান থেকে বিভিন্ন প্রকারের শাক সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন সাধন বালা। যা দিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

সাধন বালা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের আহম্মদনগর গ্রামের পোদ্দার বাড়িতে স্বামীকে নিয়ে বসবাস করেন। নিজস্ব কোন জমি না থাকায় এক আত্মীয়ের জমিতে ঘর তুলে থাকেন এই অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি, যা গত বছর আগুনে পুঁড়ে যায়। কোন রকম ওই ঘর মেরামত করে বসবাস করেন, তাও আবার ভারী বৃষ্টি হলে সে ঘরে পানি প্রবেশ করে। ফলে ঝড় বৃষ্টি, তীব্র রোদ ও শীতের সাথে যুদ্ধ করে ওই ঘরে কোন মতে দিন অতিবাহিত করছে তিনি।

গতকাল রোববার (২২ আগস্ট) বিকেলে তার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এ সময় লক্ষ্মীপুর শহরের তরকারী হাটায় শাক বিক্রি করছিলেন তিনি। তখন সাধন বালা বলেন, বিগত ২০ বছর থেকে আমি বিভিন্নস্থান থেকে শাক সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা পাই। যার বেশিরভাগ অংশ চলে যায় স্বামীর ওষুধ খরচে। স্বামী আগে রিকশা চালাতো। গত তিন বছর থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই রিকশা চালনো বন্ধ দিয়েছে। সন্তানও নেই। এখন আমার উপর স্বামীর চিকিৎসা করানো এবং সংসার চালানোর দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সকালে বাড়ির আশেপাশের পরিত্যক্ত মাঠে বা ডোবায় শাক সংগ্রহের জন্য নেমে পড়ি। বিকেলের দিকে শহরে বিভিন্নস্থানে বসে সেগুলো বিক্রি করি। যে টাকা পাই, যাতায়াতে চলে যায় দৈনিক ১শ’ টাকা। সেলাইয়ের কাজ জানা আছে, একটি সেলাই মেশিন পেলে শাক কুড়ানো বাদ দিয়ে ঘরে বসেই সেলাইয়ের কাজ করতাম। বৃদ্ধ বয়সে ডোবায় নেমে বা গ্রামে হেঁটে হেঁটে বুনো শাক খোঁজা খুব কষ্টকর। নিজেও শারীবিকভাবে একটু অসুস্থ।

বয়স্ক ভাতা পান কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রকৃতভাবে বয়স বেশি হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম। তাই বয়স্কভাতা পাই না। আমার স্বামীর বয়সও ৬০ এর উপরে। সেও বয়স্ক ভাতা পায় না। তবে মাঝে মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল পাই। যা দিয়ে কয়েকদিন চলে।

সাধন বালা আরও জানান, তার নিজের ও স্বামীর কোন জমি নেই। বোনের বাড়িতে একটি ঘরে থাকতেন। সে ঘরটি গেল বছর আগুনে পুঁড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়। পরে পোড়া টিন দিয়ে স্থানীয়দের সহযোগীতায় কোনভাবে পুনরায় ঘর তুলে এখন বসবাস করছেন। কিন্তু বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতর পানি ঢুকে। নিজেদের সাধ্য নেই নতুন টিন কিনে ঘরে লাগাবে। তাই ঘর মেরামতে প্রশাসন এবং বিত্তশালীদের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।

সাধন বালার বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, সাধন বালা প্রকৃত অসহায় হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতা করা হবে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.