বাংলাদেশে আইএফসির অর্থায়ন বেড়েছে ৩৩%

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বেসরকারি খাত বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) গত অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশে ৭৯ কোটি ১০ লাখ ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে যা প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি। মঙ্গলবার দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্থাটির বিনিয়োগের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য রয়েছে।

এতে বলা হয়, সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের রক্ষা এবং বেসরকারি খাতের কার্যক্রম ও কর্মসংস্থান বজায় রাখতে সহায়তার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) লক্ষ্যনির্দিষ্ট এবং টেকসই বিনিয়োগ ২০২১ অর্থবছরে শক্তিশালী প্রভাব অব্যাহত রেখেছে। চিকিৎসাসেবা, টিকা ও সরবরাহ এবং প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) খাতে সহায়তার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সাশ্রয়ী আবাসন ও ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের সমাধানে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারকারী বিনিয়োগ (ইমপ্যাক্ট ইনভেষ্টমেন্ট) বাড়িয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোভিডের কারণে বর্তমানে ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিঘ্ন পরিস্থিতি বিরাজমান। এমন একটি সমস্যাগ্রস্ত বছরের মাঝেও গত অর্থবছরে আইএফসি পরিবেশবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শক্তিশালী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৮০ কোটি ডলারের বেশি অংকের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর ফলে এই অঞ্চলে গত ৫ বছরে আইএফসির বিনিয়োগ রেকর্ড দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার। ভারত সারবিশ্বে আইএফসির সবচেয়ে বড় গ্রাহক গত জুন শেষে আইএফসির মোট প্রতিশ্রুত অর্থায়নের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার, যা এর আগের বছরের চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি।

এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য নিযুক্ত আইএফসির ভাইস প্রেসিডেন্ট আলফনসো গার্সিয়া মোরা বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংকট এ অঞ্চলের বেসরকারি খাতের ওপর প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে সবচেয়ে অসুবিধাগ্রস্ত জনগোষ্ঠী মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। করোনার সংক্রমণ অঞ্চলের আর্থিক খাতে বিদ্যমান দুর্বলতাকে উন্মুক্ত করেছে। এর প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক মানুষকে বিপদে ফেলেছে। এ কারণে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে টিকে থাকার সামর্থ্য অর্জনে সহায়তা করতে মনোযোগ সুনির্দিষ্ট করেছি। কেননা পুনরুদ্ধারের রাস্তা দীর্ঘ হবে বলে ইঙ্গিত রয়েছে।’

আইএফসি জানায়, কোভিড সাড়া হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্থাটি ৫৯ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আরও ১০ কোটি ডলার পাইপলাইনে আছে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য আর্থিক সহায়তা বিভিন্ন খাতের গ্রাহকদের এমন এক সময়ে সহায়তা করেছে যখন অতিমারির কারণে অর্থনৈতিক পতন বাজার মনোভাবের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া আইএফসি জলবায়ু অর্থায়নে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং এই অঞ্চলে আইডিএ/ এফসিএস (ভঙ্গুর ও বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকা ক্যাটাগরিতে ইন্টারন্যাশনালের ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তাপ্রাপ্ত) আওতায় থাকা দেশগুলোতে ৪৯ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আইএফসি ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) এবং টিকার মতো জরুরি ওষুধ পণ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য অর্থায়ন এবং পরামর্শ সেবা দিয়েছে। আইএফসি এ অঞ্চলে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোর অতি প্রয়োজনীয় তারল্য সংস্থানে আরও মনোযোগ দেবে, যাতে তারা কার্যক্রম চালু রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নিযুক্ত আইএফসির নতুন আঞ্চলিক পরিচালক হেক্টর গোমেজ আনগ বলেন, ‘অতিমারির প্রভাব এবং এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি একটি সম্মিলিত, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনযোগ্য এবং জলবায়ুবান্ধব পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীতাকে সামনে নিয়ে এসেছে, যা ভবিষ্যৎ অভিঘাত মোকাবিলা করতে পারে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা পাঁচটি দেশের মধ্যে তিনটি দেশই এ অঞ্চলে।’

দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অঞ্চল এবং ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বছরে গড়ে ১ দমমিক ৮ শতাংশ কমতে পারে বলে প্রাক্কলন রয়েছে। এ অঞ্চলের দেশগুলো যথাযথ উদ্যোগ না নিলে ২১০০ সাল নাগাদ জিডিপি গড়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ কমতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত কাজে লাগানো হয়নি (আনট্যাপড) এমন ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারের জলবায়ু বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জলবায়ু পরিবর্তন কর্ম-পরিকল্পনার (২০২১-২৫) আওতায় আইএফসি প্যারিস চুক্তির উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত নতুন প্রকৃত খাতের কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আগামী ৫ বছরে জলবায়ুর জন্য গড়ে ৩৫ শতাংশ অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এছাড়া আইএফসি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ সুযোগ সৃষ্টিতে এর চেষ্টা জোরদার করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন কর্ম-পরিকল্পনায় উল্লেখিত ৫টি মূল খাতকে কার্বন নিঃসরণমুক্ত করতে বেসরকারি অর্থায়নের যোগান দেবে।

অর্থসূচক/এমআর/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.