মাজার-ই-শরিফের পর জালালাবাদ নিয়ন্ত্রণ নিল তালেবান

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বালখ প্রদেশের মাজার-ই-শরিফ শহরে পতনের পর দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর জালালাবাদের দখল নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। কোনো যুদ্ধ ছাড়াই সশস্ত্র ওই গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা শহরটির দখল নেয় বলে স্থানীয় কর্মকর্তা ও বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

সর্বশেষ রোববার (১৫ আগস্ট) সকালে জালালাবাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। জালালাবাদের পতনের পর এখন বড় কোনো শহর হিসেবে একমাত্র রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণই দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের হাতে রয়েছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের রাজধানী শহর জালালাবাদ। রোববার ভোরে শহরটি দখলে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। এটি আফগানিস্তানের পঞ্চম বৃহত্তম শহর এবং রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ৮০ মাইল পূর্বে অবস্থিত। এর কিছু সময় আগে চতুর্থ বৃহত্তম আফগান শহর মাজার-ই-শরীফ দখলে নেয় তালেবান।

এছাড়া জালালাবাদ শহর দখলে নেওয়ার পর অনলাইনে এ সংক্রান্ত ছবি পোস্ট করেছে তালেবান। সেখানে তালেবান যোদ্ধাদেরকে জালালাবাদের গভর্নরের অফিসের ভেতরে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে তালেবানের হাতে জালালাবাদ শহরের পতনের কথা নিশ্চিত করেছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও। আহমদ ওয়ালি নামে জালালাবাদের এক বাসিন্দা জানান, ‘আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে শহরের চারদিকে কেবল তালেবানের পতাকা দেখতে পাচ্ছি। কোনো ধরনের যুদ্ধ ছাড়াই তারা শহরে প্রবেশ করেছে।’

জালালাবাদ-ভিত্তিক অন্য এক আফগান কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এখানে কোনো যুদ্ধ হয়নি। কারণ গভর্নর নিজেই তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর একমাত্র পথই হচ্ছে বিনা বাধায় তালেবানের হাতে শহরটি তুলে দেওয়া।

এর আগে গতকাল শনিবার উত্তরাঞ্চলের শহর মাজার-ই-শরিফ-এর দখল নেয় তালেবান। তালেবানবিরোধী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শহর মাজার-ই-শরিফ বেহাত হওয়ায় আফগান সরকার বেশ বড় ধরনের একটি ধাক্কা খায়। এবার জালালাবাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেল। মাজার-ই-শরিফের গুরুত্বপূর্ণ দুই মিলিশিয়া নেতা আত্তা মোহাম্মদ নূর ও আব্দুর রশিদ দোস্তুম পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে আফগান সেনা বাহিনীর গাড়িবহর মাজার-ই-শরিফ ছেড়ে গেছে।

মাজহার-ই-শরিফ শহরটি উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তান বর্ডারের কাছাকাছি। এর আগে ১৯৯০ সালে তালেবান গোষ্ঠী এই শহর দখলে নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রদেশটির রাস্তায় রাস্তায় তালেবান সদস্যদের চলাচল।

যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত সেনা প্রত্যাহারের পর থেকেই ক্ষিপ্র গতিতে একের পর এক শহর দখলে নিচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তালেবান খুবই অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী কাবুলে হামলা চালাতে পারে। আফগান সরকার যেকোনো কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে চাইবে। ফলে সেখানে ব্যাপক সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে বহু মানুষ। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে আফগানিস্তানের বিভিন্ন শহর থেকে নিরাপদ ভেবে অনেকেই রাজধানী কাবুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট শুক্রবার থেকে তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের অন্তত ২১টির রাজধানী নিজেদের দখলে নিয়েছে।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.