প্রবাসীরা দেশকে দিয়েছে এখন দেশ তাদের দেবে: প্রধানমন্ত্রী
করোনা সংকটের কারণে ২০২০ সালে দেশে ফিরেছেন ৫ লাখ প্রবাসী। এই প্রবাসীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে। যাতে করে তারা সামাজিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।
এসব বিষয় বিবেচনা করে ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্প’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার (২৮ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দুই হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২ হাজার ১৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৪২৫ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরে-বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দেশে দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গেল দেড় বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়ে দেশে ফিরেছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুণ আর্থিক কষ্টে কাটছে তাদের জীবন। ফেরত আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসনে সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে। এর মাধ্যমে দুই লাখ শ্রমিক ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা পাবেন। এছাড়া পুনরায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ, দেশে কাজের সংস্থান, ব্যবসার পুঁজি জোগান, এমন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ প্রবাসী শ্রমিককে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে নগদ অর্থ হিসেবে প্রত্যেককে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। ফেরত শ্রমিকদের মধ্যে দক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ কর্মী বাছাই করে সরকারের বিভিন্ন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সনদের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে দেশে-বিদেশে চাকরিতে তারা বিশেষ সুবিধা পায়। এছাড়া আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও ঋণ সুবিধা পাওয়াসহ সব ধরনের সেবা সহজ করা হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসার উদ্যোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও আর্থিক ও পরামর্শ সুবিধা দেওয়া হবে।
এ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রবাসীরা এতদিন অর্থ পাঠিয়ে দেশকে অনেক দিয়েছে, এবার দেশ তাদের দেবে। তাদের প্রয়োজনে সম্ভব সব কিছু করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় থাকা জেলাগুলো হলো- ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। পরিকল্পনা কমিশনের সব সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনা সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, নতুন রাস্তা এবং সড়ক নির্মাণে ইউলুপ এবং আন্ডার পাসের ব্যবস্থা রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী-যাতে সড়ক ব্যবহারকারী ছাড়াও অন্যদের যাতায়াতে কোনো সমস্যা না হয়। এছাড়া সেতু এবং কালভার্ট নির্মাণে উচ্চতা সঠিক থাকে। কারণ, পানি কখনো বাড়ে কখনো কমে। এতে নৌযান চলাচল যাতে কোনভাবেই বিঘ্নিত না হয়। এব্যাপারে নৌপরিবহন এবং সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি কার্যকর সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে যেখানে- যেখানে সেখানে বালু মহাল গড়ে না তোলা, এতে বাঁধ এবং নদী ভাঙনের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। নারীদের কম্পিউটার শিক্ষাকে প্রকল্পের মধ্যে আটকে না রেখে রাজস্ব খাতে নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
অর্থসূচক/কেএসআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.