‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা আর নেই

‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ রোববার (০৪ জুলাই) ভোররাত ৪টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এর আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হলো। গীতিকার কবির বকুল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গীতিকারের ছেলে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক ওয়াসিফ-এ-খোদা, তার মা এবং স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে তার মা করোনা আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় সেরা ২০ গানের মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে ফজল-এ-খোদার লেখা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি।

বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক এই গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ, পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে। বাবা মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মা মোসাম্মাৎ জয়নবুন্নেছার ঘরে জন্ম নেওয়া তাদের প্রথম সন্তান ফজল-এ-খোদা।

ফজল-এ-খোদা’র কর্মজীবন শুরু হয় বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে ১৯৬৩ সাল থেকে। ১৯৬৪ সালে টেলিভিশনে তিনি তালিকাভুক্ত হন। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা ফজল-এ-খোদা ‘মিতা ভাই’ নামেও পরিচিত।

তার লেখা বহুগান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। এর মধ্যে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ মুক্তিযুদ্ধে সাত কোটি মানুষকে উদ্দীপ্ত করে। ১৯৭১-এ অসহযোগ অন্দোলন চলাকালে তার লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে।

ফজল-এ-খোদা’র কালজয়ী অনেকগুলো গান এখনও মানুষকে আন্দোলিত করে। ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, ‘বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, ‘আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’- এমন অসংখ্য গানের রচয়িতা ফজল-এ-খোদা। তার গানগুলো প্রয়াত বশীর আহমেদ, আবদুল জাব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রথিন্দ্রনাথ রায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের কণ্ঠে দর্শক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে।

আজাদ রহমান, আবদুল আহাদ, ধীর আলী, সুবল দাস, কমল দাশগুপ্ত, আবেদ হোসেন খান, অজিত রায়, দেবু ভট্টাচার্য, সত্য সাহা প্রমুখের মতো সঙ্গীতজ্ঞ ফজল-এ-খোদা’র গানগুলোতে সুর করেছেন। মূলত ছড়া দিয়ে তার লেখালেখি শুরু। তার ছড়াগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি আর কবিতা গ্রন্থ ৫টি। এছাড়াও গান, নাটক, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩৩টি। এ ছাড়াও সত্তর দশকে শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ ফজল-এ-খোদা’র নিপুণ সম্পদনায় প্রকাশিত হতো।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হলে ফজল-এ-খোদা তার দুঃখ এবং ক্ষোভ গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যা সেই সময়ের কল্পনাতীত ঘটনা। বশীর আহমদের সুরারোপে মোহাম্মদ আবদুল জাব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদা’র সেই গানটি ছিল ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহংগ / সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিলো না’। গানটি ১৯৭৬ সালে রেকর্ড ও বেতারে প্রচারিত হয়।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.