করোনা সংকটেও বেড়েছে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা

করোনা সংকটে কঠিন সময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। অতিমারির কারণে আমদানি-রফতানিতে গতি নেই। অভ্যন্তরীন ভোগও কমছে। এতে নতুন বিনিয়োগ অনেকটাই স্থবির। এ কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণে নেই আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি। অনেক ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড়। তবে এসবের মধ্যেও ভাল পারফর্ম করছে দেশের ব্যাংকিং খাত। চলতি হিসাববছরের (২০২১) প্রথমার্ধে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।

তবে পরিচালন মুনাফা বাড়লেই যে নিট মুনাফা বাড়বে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ পরিচালন মুনাফা থেকে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি রাখা এবং আয়কর পরিশোধের পরই কেবল নিট মুনাফা নির্ধারিত হবে। তাই কোনো ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা বাড়লেও যদি সঞ্চিতির প্রয়োজনীয়তা তারচেয়ে বেশি হারে বেড়ে থাকে তাহলে ওই ব্যাংকের নিট মুনাফা গত বছরের চেয়েও কম হতে পারে। আবার সঞ্চিতির প্রয়োজন কম হলে কম পরিচালন মুনাফা থেকেও গত বছরের চেয়ে নিট মুনাফা বাড়তে পারে। তাই পরিচালনা মুনাফার তথ্যের উপর ভিত্তি করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া-ই ভাল।

গতকাল ৩০ জুন, বুধবার ছিল ব্যাংক ক্লোজিং। এ দিন চলতি হিসাববছরের প্রথমার্ধের হিসাব মিলিয়েছে ব্যাংকগুলো। আর এই হিসাব অনুসারে, বেশিরভাগ ব্যাংক আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে।

কোনো ব্যাংকই আনুষ্ঠানিকভাবে বা অফিসিয়ালি ষাণ্মাসিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। নিট মুনাফা হিসাবের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পর্ষদ সভায় ওই আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হবে। তাই অনানুষ্ঠানিক সূত্র থেকে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা মুনাফার যে হিসাব পাওয়া গেছে, প্রকৃত পরিচালন মুনাফা তারচেয়ে কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।

এখন পর্যন্ত অর্থসূচক ১৬টি ব্যাংকের মুনাফার তথ্য জানতে পেরেছে। পাঠকদের জন্য এই রিপোর্টে তা তুলে ধরা হল-

সূত্র অনুসারে, প্রতি বছরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ১ হাজার ৭ কোটি টাকা।

চলতি বছরের (২০২১) প্রথমার্ধে তথা জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাস সময়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪৭২ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৪২ কোটি টাকা। এ হিসেবে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৩০ কোটি টাকা।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) ২০২১ সালের ষাণ্মাসিকে (জানুয়ারি-জুন) পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ১৭৫ কোটি টাকা।

এ বছর প্রথম ছয় মাসে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪০৮ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে ছিল ৩৪৬ কোটি টাকা।

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক ২০২১ সালের প্রথম ষাণ্মাসিকে (জানুয়ারি-জুন) ৮০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। এর আগের বছরে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৭০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১০ কোটি টাকা বা ১৪ শতাংশ।

২০২১ সালের ষাণ্মাসিকে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এ সময় ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯১ কোটি টাকা।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৫৮ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ২৪৩ কোটি টাকা।

ষাণ্মাসিকে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৩০৫ কোটি টাকা।

এক্সিম ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৩৪০ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩১৭ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়ার পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৮৩ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে ছিল ৩৫৩ কোটি টাকা।

এ বছর ঢাকা ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি টাকা।

যমুনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩০১ কোটি টাকা। গতবার ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ২৬২ কোটি টাকা।

এনসিসি ব্যাংকের এ বছর প্রথম ছয় মাসে ৩১৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। গত বছর যা ছিল ২৯০ কোটি টাকা।

পূবালী ব্যাংকের ৫০৫ কোটি টাক পরিচালন মুনাফা হয়েছে। ২০২০ সালের ষাণ্মাসিকে যা ছিল ৪০০ কোটি টাকা।

ব্যাংক এশিয়া গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৪৮৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৩৫১ কোটি টাকা।

ডাচ বাংলা ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৫০৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৪১৭ কোটি টাকা।

ঢাকা ব্যাংক বছরের ছয় মাসে মুনাফা করেছে ৩০৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ২৬৩ কোটি টাকা।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.