এনবিআরের মাঠকর্মীদের ক্ষমতা কমানোর দাবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেওয়া বিশেষ ক্ষমতা (Discretionary Power) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কর্মাকর্তাদের একাংশ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তাদের হয়রানির শিকার হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ, বিশেষ করে করোনাভাইরাসের অভিঘাত থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই বিশেষ ক্ষমতার লাগাম টানতে হবে।

বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিজিসিসিআই) আয়োজিত বাজেট সংক্রান্ত এক ওয়েবিনারে এনবিআর কর্মকর্তাদের বিশেষ ক্ষমতা কমানোর এই দাবি জানানো হয়।

বুধবার (১৬ জুন) প্রস্তাবিত বাজেটঃ ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্ভাব্য প্রভাব শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, এইচ.ই. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান এবং এমচাম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
বিজিসিসিআইয়ের সভাপতি থমাস হফম্যান ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমেদ মাশুক এন্ড কোং এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুক আহমেদ এফসিএ। বিজিসিসিআইয়ের নির্বাহী উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাহী রাষ্ট্রদূত শাহেদ আখতার ওয়েবিনারটি মডারেট করেন।

ওয়েবিনারের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিজিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরুণ পাটোয়ারী, সহ-সভাপতি ড. রিয়াদ মামুন, শাইনপুকুর সিরামিকসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির এফসিএ, সিমেন্স হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মর্তুজা মেনন, সুইজারল্যান্ড-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্সের সেক্রেটারি জেনারেল সাদ ওমর ফাহিম প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধে করপোরেট কর হার হ্রাস, ইলেকট্রনিক্স ও অটোমোবাইলসসহ কিছু স্থানীয় শিল্পকে কর অব্যাহতি দেওয়া, কিছু ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতির প্রস্তাবকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতির বিকাশের জন্য ইতিবাচক বলে অভিহিত করা হয়। তবে ব্যবসা প্রমোশনের ব্যয় সীমা কমানোসহ কিছু প্রস্তাব কার্যকর হলে ব্যবসার প্রসার ব্যাহত হবে বলে মন্তব্য করা হয়।

প্রবন্ধে মাশুক আহমেদ ন্যুনতম করকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য একটি বাধা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, অনেক সময় কোম্পানির পর্যাপ্ত মুনাফা হয় না। এ অবস্থায় ন্যুনতম কর পরিশোধ করতে গিয়ে কোম্পানির মূলধনে টান পড়ে। তাতে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কমে যায়। তিনি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই কর সমন্বয়ের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করেন।

ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি আমেরিকান-বাংলাদেশ চেম্বারের সাবেক সভাপতি এরশাদ আহমেদ অভ্যন্তরীন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সব ধরনের শিল্প কাঁচামালের উপর থেকে উৎসে কর ও মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, অর্থনীতির বিকাশে যোগ্য মানবসম্পদ গড়ে তোলা জরুরি। কিন্তু করোনায় মনবসম্পদে বড় আঘাত লেগেছে। ডিজিটাল বৈষম্যের কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী করোনাকালে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই সময়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। বাল্য বিবাহ বেড়েছে। এই সমস্যার সমাধানে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। উল্টো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর কর আরোপ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো টিউশন ফি বাড়ানোসহ নানা উপায়ে এই কর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করে নেবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

শাইনপুকুর সিরামিকসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির এফসিএ বলেন, বাজেটের একটি বিষয় সবার নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর বাজেট সংশোধন করা হয়। কোনো কোনো খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়, আবার কোনো কোনো খাতে বরাদ্দ কমানো হয়। কিন্তু মূল বাজেট ও সংশোধিত বাজেটের বরাদ্দের এই ব্যবধান নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা হয় না। সংশোধিত বাজেট প্রকৃতপক্ষে কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে সেটিও জানা যায় না।

তিনি টার্নওভার কর প্রত্যাহারের দাবি জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আয়করের দর্শন অনুসারে মুনাফার উপর কর প্রযোজ্য,; কোনোভাবেই তা কোম্পানির বিক্রি বা রাজস্বের উপরে প্রযোজ্য হতে পারে না।

ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি এইচ.ই. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এ বছরের বাজেট ব্যবসাবান্ধব বাজেট। আকারে এটি দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়নি। ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আয়কর হ্রাস, কর অব্যাহতি, ভ্যাট অব্যাহতিসহ নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিবাজার জার্মানিতেও স্বাভাবিক অবস্থা ব্যাহত। তারপরও লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধের মধ্যেই তারা (বাংলাদেশ দূতাবাস) জার্মান বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.