‘দেশের স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানো প্রয়োজন’

দেশের স্বাস্থ্য খাত সব সময় উপেক্ষিত। এই খাতে প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ দেওয়া হয় কম। আবার যা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার বড় অংশ অনিয়ম-দুর্নীতিতে নষ্ট হয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় এই খাতটি ঢেলে সাজানো দরকার।

ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত “জাতীয় বাজেটঃ প্রেক্ষিত-স্বাস্থ্য ও পরিবেশ” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বুধবার (৯ জুন) এ কথা বলেন আলোচকরা।

ওয়েবিনারে মূল আলোচক ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ডা. রশিদ -ই-মাহবুব, সাবেক সভাপতি, বিএমএ, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সিপিডি, ডাঃ এ. এম. জাকির হোসেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও রোগ নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর (আইইডিসিআর)-এর সাবেক পরিচালক ও বাপা’র পরিবেশ স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক, অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতার, সদস্য সচিব, ডক্টরর্স প্লাটর্ফম ফর পিপলস হেলথ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মনজুরুল আহসান বুলবুল, সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।

আরও বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সাবেক উপাচার্য, বিএসএমএমইউ, অধ্যাপক নাজমুন নাহার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ডা. মোস্তাক হোসেন প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট এর সভাপতি, অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ, স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম, মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক, ডা এম এইচ ফারুকী এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক, ডা. এম. গোলাম আযম।

মূল বক্তব্যে ডা এম এইচ ফারুকী বলেন, দেশের চিকিৎসা তথা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবেই উপেক্ষিত। দেশের স্বাস্থ্যসেবায় দীর্ঘদিনের বিদ্যমান সংকট, সীমাবদ্ধতা ও অব্যবস্থাপনা করোনাকালীন সংকটে আরো প্রকট ও নগ্নভাবে দেশবাসী তথা সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে দৃশ্যমান হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বেশকিছু অর্জন এবং কিছু সূচকের অগ্রগতি ঘটলেও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে জনতুষ্টি আসেনি। এর কারণ বাজেট স্বল্পতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্বল অবকাঠামো, জনবলের ঘাটতি ও অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষতা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, শিক্ষার মানের অবনমন, গবেষণার দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা, সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে একই বিশেষজ্ঞ দ্বারা চিকিৎসা সেবা চালু রাখা।

তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এর সঙ্গে করোনা অতিমারিকালে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ’ প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী যা, বিগত বছরের স্বাস্থ্যখাতে গতানুগতিক বরাদ্দের ধারাবাহিকতাই মাত্র। এ বাজেট বর্তমান বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোন সুফল বয়ে আনবে না।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান আগের বছরের দশ হাজার কোটি টাকা কোথায় খরচ হয়েছে এবং আগামীর জন্য বরাদ্দের দশ হাজার কোটি টাকা কোথায় ব্যয় হবে সেটির হিসাব জনগনের নিটক পেশ করার দাবী জানান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না গোটা জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। নাগরিক হেলথ কমিশন গঠন করার দাবী করেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. রশিদ -ই-মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে এই খাতে বাজেট বৃদ্ধির দাবি জানান। তিনি বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের আহবান জানান।

অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যের পাশা-পাশি পরিবেশের স্বাস্থ্যও ঠিক রাখার দাবী জানান। বলেন জনগণের স্বাস্থ্য জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারাই তাই সবাইকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার আহবান জানান।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা ও অসামজস্যতা দূর করার দাবী জানান। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকর সক্ষমতা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান তিনি। সার্বজনীন স্বাস্থ্য বিমা চালুর দাবী করেন।

ডাঃ এ. এম. জাকির হোসেন বলেন,মানুষের শারিরীক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ২৫ ভাগ দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য খাতে যা অত্যন্ত অপ্রতুল, তিনি ৬২ ভাগ এখাতে বরাদ্দের আহবান জানান।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.