বীমার শেয়ারে বড় মূল্য সংশোধন

অস্বাভাবিকভাবে উড়তে থাকা বীমা খাতের শেয়ার বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। আজ রোববার (৬ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ারের দর হারিয়েছে। এদিন শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ২০ কোম্পানির তালিকায় স্থান পায়নি কোনো বীমা কোম্পানি। অন্যদিকে দর হারানো শীর্ষ ২০ কোম্পানির তালিকায় অর্ধেকেরও বেশি ছিল এই খাতের।

ডিএসই’র লেনদেনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

আজ ডিএসইতে বীমা খাতের ৫০ কোম্পানির মধ্যে ৪০টি শেয়ারের দর হারিয়েছে, যা মোট সংখ্যার ৮০ শতাংশ। এদিন মাত্র ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, যা মোট কোম্পানির ১৬ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, বীমা খাতের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বড় মূল্য সংশোধন অনিবার্য। তাদের মতে, এই খাতের শেয়ারে বিপুল পরিমাণ তহবিল ঢুকে কৃত্রিমভাবে মূল্যকে ফুলিয়েফাঁপিয়ে তুলেছে। হয়তো অনেক বড় ও প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী আছেন। কিন্তু মৌলভিত্তি সমর্থন করলে দিনের পর দিন কৃত্রিমভাবে শেয়ারের মূল্যকে বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই মাঝেমধ্যেই এই খাতে বড় সংশোধনের আভাস দেখা যায়। আর এই সংশোধনের ধারা দেখা গেলেই, রহস্যজনকভাবে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো না কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয় যা পতন ঠেকিয়ে শেয়ারের মূল্যকে ফের উর্ধমুখী করতে সহায়তা করে। এভাবে এই খাতের শেয়ার বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে এসেছে। তাই মূল্য সংশোধন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

তাদের মতে, বীমা খাতের শেয়ারে যদি এখন মূল্য সংশোধন না হয়ে আরও বাড়তে থাকে তাহলে এটি বিনিয়োগকারী ও বাজার-উভয়ের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠবে। আরও দাম বৃদ্ধির পর মূল্য সংশোধন হলে বেশি মাত্রায় ক্ষতি হবে বিনিয়োগকারীদের। অন্যদিকে তখন এই খাতে সংশোধন শুরু হলে সামগ্রিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সূচক হতে থাকবে নিম্নমুখী।

আজকের বড় মূল্য সংশোধনের পেছনে ২টি বিষয় ছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। প্রথমত: মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এই সংশোধন ছিল অনিবার্য। দ্বিতীয়ত: আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্যান্য খাতের কোম্পানির করপোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হলেও ব্যাংক, বীমা ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানে আগের কর হার বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে অনেক বিনিয়োগকারী আশাহত হয়েছেন, যার প্রভাব পড়েছে এই খাতের শেয়ারে।

আজ ডিএসইতে শেয়ারের দর হারানোতে শীর্ষ ২০ কোম্পানির তালিকায় ১১টি ছিল বীমা খাতের কোম্পানি। এদিন শেয়ারের দর হারানোতে বীমা খাতের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় সবার উপরে ছিল ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স। ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তালিকার বাকী ৯টি কোম্পানি হচ্ছে- রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স (৯.৭২%), এশিয়া ইন্স্যুরেন্স (৮.৮৮%), জনতা ইন্স্যুরেন্স (৮.১৬%), নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স (৭.৬৫%), ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স (৭.৫৫%), গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স (৭.৫৬%), প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেনন্স (৭.৩২%), গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স (৬.৯৮) এবং প্রগতি ইন্স্যুরেন্স (৬.৪০)।

দাম বেড়েছে ৮ কোম্পানির

আজ বীমা খাতের মূল্য সংশোধনের দিনেও বিপরীত স্রোতে এগিয়ে গেছে এই খাতের ৮ কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬.৭৫ শতাংশ দাম বেড়েছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের। আর সবচেয়ে কম ০.৪৫% দাম বেড়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের। তালিকায় থাকা বাকী ৬টি কোম্পানি হচ্ছে- ঢাকা ইন্স্যুরেন্স (৬.৫২%), ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স (৪.৪৮%), প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৩.৫৪%), পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৩.০১%), রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স (১.৬১%), মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স (০.৮২%), প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স (০.৭৭%) ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স (০.৬৭%)।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.