বাজেট দেশীয় শিল্প ও বেসরকারি খাত সহায়কঃ বিসিআই

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে দেশীয় শিল্প ও বেসরকারি খাত সহায়ক বাজেট হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।

বিশেষ করে দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারী বৃৃহত শিল্পে (অটোমোবাইল খাত) ২০বছর, হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্পে ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ১০ বছর কর অব্যাহতি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ১০ বছর কর অব্যাহতি প্রদানের বিষয়কে স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের একমাত্র প্ল্যাটফরমটি।

আজ শুক্রবার (৪ জুন) বিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এর আগের দিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন।

বিসিআইয়ের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা ও শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জনগণের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কল্যাণমুখী বাজেট দিয়েছে সরকার।

এতে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতি এখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত, ঠিক এই কঠিন সময়ে আজকের জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২% মূল্যস্ফীতি ৫.৩ শতাংশ নির্ধারণ করে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জন্য ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে এরূপ উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক হলেও বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে।
ঘোষিত বাজেটে কোনো নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ১০০ জন তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক অথবা মোট কর্মীর ১০% তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ করলে আয়করে ৫ শতাংশ রেয়াতের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিকে ইতিবাচ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে বিসিআই।

বর্তমানে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সমূদয় মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে করহার ৩৭.৫%। বিসিআই এই কর কমানোর প্রস্তাব করেছিল কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বিসিআই  শিল্প প্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রাংশের উপর আরোপিত ১% এর অতিরিক্ত সকল প্রকার শুল্ক-করাদি মওকুফ করার জন্য পুনরায় অনুরোধ জানিয়েছে ।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার জন্য এবং দেশের সকল মানুষের সুলভে মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্রগ্রাম জেলার বাইরে স্থাপিত হাসপাতালে ১০ বছর কর অব্যাহতি প্রদান করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিসিআই।
প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট কর ২.৫% কমানো হয়েছে, যা বিসিআই স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি এই কমানোর ধারাবাহিকতা নূন্যতম আগামী ৩ বাজেটে অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর (এটি) ৪% থেকে কমিয়ে ৩% করা হয়েছে। বিসিআই আগাম কর সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছে। ৩ কোটি টাকার টার্নওভারে নূন্যতম কর হার ০.৫০% থেকে কমিয়ে ০.২৫% করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি তবে টার্নওভারের নূণ্যতম হার ৪ কোটিতে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে। মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী কর বৎসরের করমুক্ত আয়ের সীমাঃ ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে বিসিআই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর ১৫% কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেহেতু উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর প্রস্তাবিত কর হার পূন:বিবেচনার প্রস্তাব করেছে বিসিআই। তাদের মতে, কর আরোপ হলে দেশে উচ্চশিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
বিসিআইয়ের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ জনিত কারনে কর্মহীনতা ও আয়- হ্রাস কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা কর্মসূচী, প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচী, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচী প্রভৃতির আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে যা ইতিবাচক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে।
দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নজর দেয়া হয়েছে। মানব সম্পদকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করা হলে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা সহজিকরন করে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেছে বিসিআই।
মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা যা বিগত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯.৬৩% বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে আমরা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করেছি। উপজেলা পর্যায়ে কর অফিস স্থাপনের প্রস্তাব পূনব্যাক্ত করছে বিসিআই, যার ফলে করের আওতা ও রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.