পটুয়াখালী উপকূলে ২১ গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ও পূর্ণিমা ‘জো’র প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলে ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে জেলার উপকূলীয় কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার ২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে এখন দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। আতঙ্কে রয়েছে পটুয়াখালীসহ উপকূলের ২১ লাখ মানুষ।

কলাপাড়ার লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, লালুয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্ত:ত ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাবার খবর পাওয়া গেছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম হাওলাদার জানান, ৭০’র পর কখনও এমন ভয়বাহ পানি এ অঞ্চলে হয়নি। পানির তোড়ে ইউনিয়নের চরলতা বেড়িবাঁধের ৭টি পয়েন্টের প্রায় ৪০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এসব বেড়িবাঁধ দিয়ে এবং আগের ৪ কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রবল বেগে জোয়ারের পানি ঢুকে চালিতাবুনিয়ার ৮ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ইউনিয়নের ৯ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

তিনি আরও জানান, পানিবন্দি মানুষজন পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। এছাড়াও জোয়ারের পানির তোড়ে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ারচর, চরবেষ্টিন ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় এবং ওইসব গ্রাম প্লাবিত হয়।

এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, এই উপকূলে বাতাস নেই, বৃষ্টি নেই। তবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমা ‘জো’র প্রভাবে অন্ত:ত ৫ থেকে ৬ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। পানির তোড়ে উপজেলার চালিতাবুনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে এবং জোয়ারের পানি ঢুকে বহু মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

প্রশাসনের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আরও খোঁজ-খবর নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হবে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলার জন্য পাটুয়ালীর বিভিন্ন এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৯৩টি মেডিকেল টিম, ৫০ হাজার খাবার স্যালাইন, ডায়রিয়ার স্যালাইন ৩৫ হাজার, এক লাখ টাকার শিশু খাদ্য, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন উপজেলায় ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ, সিপিপি, রেডক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাৎক্ষণিক তথ্য প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দু’টি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। এছাড়া সব কয়টি উপজেলায়ও কন্ট্রোল রুম চালু করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমা ‘জো’র প্রভাবে অস্বাভাবিক পানির তোড়ে রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া, গলাচিপা ও দশমিনার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে এবং পূর্বের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপকূলের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য সাড়ে ৮ লাখ স্বেচ্ছাসেবক (ভলান্টিয়ার) প্রস্তুত রয়েছে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.