৯ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে রেকর্ড
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুন-মার্চ) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। একক মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে মার্চ মাসে। এ মাসেই বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ৯ মাসে এত বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, ৯ মাসেই তার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জুন ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত সময়ে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, মার্চে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৬ হাজার ৮৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করে সরকার। কিন্তু প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এ খাত থেকে সরকারকে দুই হাজার ২৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল।
জাতীয় বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে অন্যতম সঞ্চয়পত্র। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে বেশি ‘নিরাপদ’ মনে করছেন। তাই বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করেও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্চ মাসের তথ্য বলছে, বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ৩ থেকে ৬ শতাংশ সুদ বা মুনাফা দিচ্ছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদ মিলছে ১১ শতাংশের বেশি।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
অর্থসূচক/কেএসআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.