লক করে ‘ডাউন’ হবে করোনা?

করোনা ছড়িয়ে পড়ছে হু হু করে। বাড়ছে সংক্রমণ, মরছে মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষণা করেছে ‘কঠোর লকডাউন’। সাধারণ ছুটির আওতায় বন্ধ রয়েছে দেশের সব সরকারি ও বেসরকরি প্রতিষ্ঠান। জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু খোলা রাখা হয়েছে। তাছাড়া চালু রয়েছে শিল্পকারখানা ও পোশাক কারখানা।

‘কঠোর লকডাউনে’ করোনা সংক্রমণ কমবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, চলমান লকডাউন আর কয়েকদিন চললেই এবারের ঢেউয়ের চেইন ভেঙে যাবে। কমবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন অর্থসূচককে বলেন, ‘আমরা তো আর লকডাউন দিলেই সাথে সাথে ফল পাবো না, এর জন্য কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। কমপক্ষে দুই সপ্তাহ না যাওয়ার আগে কিছুই বলা যাবে না। এরপর সংক্রমণের ওপর প্রভাব পড়বে। তিনসপ্তাহ পর প্রভাব পড়বে মৃত্যুর ওপর।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) রোগতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ বিষয়ে অর্থসূচককে বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই সব করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ ছিল লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ালে বর্তমান চেইনটা ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে এবং সংক্রমণ নিম্নগামী হবে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে ২২-২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের সময় বাড়িয়ে সার সংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

সূত্রমতে, ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন চললেও দেশে এই সময়েই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হলো। গত তিনদিনে (১৬-১৮ এপ্রিল) দেশে পর্যায়ক্রমে মৃত্যু হয়েছে ১০১, ১০১ ও ১০২ জনের। যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার সারাদেশে আরো এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর সক্রিয় চিন্তা করছে।’

ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের জন্যে লকডাউন শিথিল হতে পারে, বলেন তিনি। সেই সাথে সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুত ও ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান সেতুমন্ত্রী।

ডা. মুশতাক হোসেন

ডা. মুশতাক হোসেনের মতে এখনো মৃত্যুর হার কমেনি। ৫ এপ্রিলের লকডাউনের পর এখন সংক্রমণ চেইন স্থিতিশীল রয়েছে। এখন কাজ করছে ৫ এপ্রিলের দেওয়া বিধি-নিষেধের ফল। চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ফল পাওয়া যাবে আরও কয়েকদিন পর।

তিনি বলেন, এখন সংক্রামণ স্থিতিশীল রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন পরীক্ষার তুলনায় ১৮-২০ শতাংশ লোক আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা ৫ এপ্রিল বিধি-নিষেধের ‘ফল’। মৃত্যুর হারের ওপর প্রভাব দেখবো আমরা আরও এক সপ্তাহ পর। আমরা আশাবাদী এই লকডাউনের পর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমবে।

এদিকে কঠোর লকডাউনে বিশেষ প্রয়োজনে চলাচলের জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ দিচ্ছে পুলিশ। যা নিতে গিয়ে অনেকে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বলে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। সূত্রমতে, মুভমেন্ট পাশ অ্যাপ চালু হওয়ার পর থেকে ১৭ এপ্রিল সকাল ১০টা পর্যন্ত মুভমেন্ট পাশের জন্য ১৭ কোটির বেশি হিট হয়। আবেদনের চাপে শুরু থেকে সার্ভারের ওপর বাড়তি চাপ ছিল। যার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় সেবা গ্রহীতাদের। এছাড়া গত কয়েকদিনে হেনস্তা হয়েছেন জরুরি সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও সাংবাদিক। পুলিশের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, ১৮ শ্রেণির লোকের চলাচলের জন্য মুভমেন্ট পাস লাগবে না। তাদের শুধুমাত্র পরিচয়পত্র দেখালেই হবে।

প্রসঙ্গত, রোববার (১৮ এপ্রিল) রাতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩১তম সভা থেকে লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে দুই সপ্তাহের কম লকডাউনে কার্যকর ফলাফল আশা করা যায় না।

এর আগে দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়, যে বিধি-নিষেধের ধারাবাহিকতা চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। এটি শেষ হবে ২১ এপ্রিল। তার আগেই জাতীয় কমিটির লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ এসেছে।

অর্থসূচক/আরএ/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.