প্রতারণার নতুন ফাঁদে সবাই ‘কাবু’

সাধারণ জনগণ, পুলিশ, ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ সবাইকে রীতিমতো ‘ঘোল’ খাইয়ে ছাড়লো প্রতারক দল। নতুন এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকেই। সুক্ষ্ম প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ফোন নম্বর, ইমেইল আইডি, আইপি ঠিকানাসহ ব্যক্তিগতু অনেক তথ্য।

আজ বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে ঘুম থেকে উঠে মুঠোফোনে কিছু সংবাদে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন সংবাদকর্মী তৌফিকুর (ছদ্মনাম)। হঠাৎ গুগলের এক বিজ্ঞাপনে চাপ লাগে তার। খুলে নতুন একটি ওয়েবপেইজ। যেখানে বলা হয়, আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন ও বাংলাদেশের বৃহত্তম অনলাইন মার্কেটপ্লেস ‘দারাজ বাংলাদেশ’ একটি ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। বিজয়ীকে দেওয়া হবে ‘আইফোন ১২’।

দারাজের লোগো দেখে বিজ্ঞাপনের পরবর্তী ধাপ অনুসরণ করেন তৌফিকুর। তিনি চক্রাকারে দেওয়া প্রতারক দলের ‘ফাঁদে’ পড়েন। দ্বিতীয় ধাপে তৌফিকুরকে জানানো হয় তিনি আইফোন ১২ পেয়েছেন। শুধুমাত্র কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলেই তাকে ফোনটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

এরপর তৃতীয় ধাপে তৌফিকুরকে বলা হয়, স্ক্রিনের লিঙ্কটি (http://lhmpwzy.co/ele/tb.php?ct=) ৫টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বা ২০ জন ব্যক্তিকে পাঠাতে হবে। তাহলে পাওয়া যাবে ১০০ পয়েন্ট। এরপরেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সেই
স্মার্টফোন। এইধাপও সম্পন্ন করেন তৌফিক। এরপর তাকে বলা হয় আরো একধাপ বাকি।

এখানে আসার পর তৌফিক দেখতে পান, ‘মোবাইল স্ক্রিনে লেখা রয়েছে, আপনাকে নীচের অ্যাপ্লিকেশনটি ইনস্টল করতে হবে এবং একবার ইনস্টল করার পর আপনাকে এটি ৩০ সেকেন্ডের জন্য খুলতে হবে। মনে রাখবেন এই পদক্ষেপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাথে সংযুক্ত করা হয় একটি লিঙ্ক সম্বলিত ‘বাটন’।

এরপর ওই বাটনে চাপলে তৌফিকুরকে বলা হয় আপনি জিতেছেন, আপনার আইপি ঠিকানা ১১*******২২২। এখন আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এরপর তৌফিক তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিলে তাকে একটি (+911550055001) নম্বরে কল করতে বলা হয়। কল করার পর তৌফিকুরকে বিভিন্ন বাটনে চাপতে বলে প্রতারক চক্র।

এর কিছুক্ষণ পর মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হলে ফোন কেটে যায় তৌফিকুরের। ১ মিনিটের জন্য ফোন থেকে কাটা হয় ২০ টাকা। নম্বরের পরিচয় শনাক্তকারী অ্যাপ ‘ট্রু কলারের’ তথ্যমতে নম্বরটি অস্ট্রিয়ার।

কয়েক ধাপ পার হয়ে তৌফিকুর বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে লিঙ্কটি তিনি পাঠাচ্ছেন তাতে লেখা রয়েছে, ‘Darez সমর্থকদের উপহার প্রদান’ এখানে Daraz এর নাম এবং শুনাম ব্যবহার করে সুকৌশলে ‘rez’ লেখা হয়েছে।

যেখানে ‘raz’ ব্যবহার করে দারাজ লেখা হয়। সেই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে দারাজের লোগো এবং মেটা ডেস্ক্রিপশনে দারাজের লিঙ্ক (daraz.com.bd) সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দারাজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চাইলে দারাজের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিউকেশন ম্যানেজার সায়ন্তনী তিশা অর্থসূচককে বলেন, সম্প্রতি বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা আমাদের ‘লিগাল টিমকে’ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আমাদের পেইজ এবং গ্রুপ থেকে প্রচারণা চালিয়ে আমাদের গ্রাহকদের সচেতন থাকার জন্য বলছি।

তিনি বলেন, গ্রাহকদের জন্য দারাজের পক্ষ থেকে পরামর্শ হলো আপনারা যে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার আগে ভালো করে দেখে নিবেন। দারাজ যদি কোনো অফার দেয় তা অবশ্যই দারাজের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে থাকবে। যাচাই-বাছাই না করে কিছু করলে অনেক ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, এটি গুরুতর প্রতারণা। ভুক্তোভোগীরা অভিযোগ জানালে আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। আমরা সব ধরনের প্রতারণা রোধে কাজ করে যাচ্ছি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা কোনো ধরনের অভিযোগ পেলে অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রশাসন সর্বদা সোচ্চার।

প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, সংবাদকর্মী একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে। বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয়ে আরো সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

আইটি এক্সপার্ট বিএনএস বাহার অর্থসূচককে বলেন, কোনো লিঙ্কে চাপার আগে যে প্রতিষ্ঠানের নাম বা যাদের কথা বলা হচ্ছে ডোমেইন ইউআরএলটি ওই প্রতিষ্ঠানের কিনা তা যাচাই-বাচাই করা দরকার। যেমন- দারাজ যদি অফার দিতো, তাহলে ওই লিঙ্কটিতে অবশ্যই daraz.com থাকতো। যারা লিঙ্কটিতে ডুকেছেন এবং লিঙ্কটি শেয়ার করেছেন তারা যদি এটি খেয়াল করতেন তাহলে সমস্যা হতো না। এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে অনেক ধরনের তথ্য নিয়ে নেয় হ্যাকাররা। এ বিষয়ে ব্যবহারকারীদের আরো সচেতন থাকা দরকার।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.