সর্বাত্মক লকডাউন: যা করা যাবে, যা যাবে না

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এবার সর্বাত্মক লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। প্রথম দফায় আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য এই লকডাউন দেওয়া হবে। এ সময়ে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন, শিল্পকারখানাও।

শুক্রবার (০৯ এপ্রিল) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমাদেরকে টোটাল (সর্বাত্মক) লকডাউনের দিকে যেতে হচ্ছে। আগামী রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।

ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সবকিছুই বন্ধ থাকবে। আশা করছি, দেশের মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করবেন। সর্বাত্মক লকডাউন সফল করার বিষয়ে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের প্রেক্ষাপট আরও খারাপ হতে পারে। সেজন্য সরকার ভেবেছে, কঠোর লকডাউনে যাওয়ার। নতুবা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে বর্তমানে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আর সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে পার্থক্য কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সর্বাত্মক লকডাউন বলতে যে চিন্তাটি করা হয়েছে সেটা হলো শুধু জরুরি সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চলবে না। এখন যেমন কিছু কিছু বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে, সেটি তখন আর করা হবে না। দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরাও এই পরামর্শ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে আগামীকাল রোববার (১১ এপ্রিল) প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেখানে বিস্তারিত থাকবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

এসব স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তা ছাড়া পরামর্শক কমিটি আরও বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের আরও অনেক জনস্বাস্থ্যবিদ সরকারকে কঠোর লকডাউনের পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেসব পরামর্শ নিয়ে ভেবেছে। তারপর এ সিদ্ধান্ত। আগামীতে যে লকডাউনের কথা চিন্তা করছে সরকার, তা কঠোর হবে অনেক। প্রয়োজনে মানুষকে লকডাউন মানাতে কঠোর হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেকটি সূত্র বলছে, এখন যেটা চলছে সেটাকে লকডাউন বলেন আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ বলেন; তা চলছে খুবই ঢিলেঢালাভাবে। এভাবে আসলে করোনা পরিস্থিতিকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্রটি বলছে, বর্তমানে সব ধরনের গণপরিবহন চলছে। বাজার, শপিংমল খোলা। অফিস–আদালত, ব্যাংক, বীমা সবকিছুই খোলা। বেসরকারি খাতের সবকিছুই খোলা। খোলা রয়েছে শিল্প-কলকারখানাও। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এসব কোনো কিছুই চলবে না। অর্থাৎ সব কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। তেমন নির্দেশনা আগামী রোববার সরকার দিয়ে দেবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রটি বলছে, তবে জরুরি সেবার ব্যাপারটা চলমান থাকবে। নতুবা মানুষ তার মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারবে না। সেজন্য জরুরি সেবার মধ্যে ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। শুধু তাই নয়, জরুরি সেবা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, স্বাস্থ্য, ত্রাণ বিতরণ, ইন্টারনেট, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনা–নেওয়া ও এর সঙ্গে জড়িত অফিসগুলো খোলা থাকবে। তবে এসব খোলা রাখার ব্যাপারেও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণা করে সরকার। কার্যকরের আগের দিন অর্থাৎ গত রোববার (০৫ এপ্রিল) তা নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে সারা দেশে গণপরিবহণ বন্ধের কথা বলা হলেও গত বুধবার থেকে পুনরায় গণপরিবহণ চলাচল শুরু করা হয়। এ ছাড়া শুক্রবার থেকে সীমিত সময়ের জন্য খুলেছে দোকানপাট, শপিংমল।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.