মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে: সালমান এফ রহমান

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, মানুষ যাতে যথাযথ সময়ে বিচার পেতে পারে আমাদের সে দিকটা নিশ্চিত করতে হবে। একটা মামলা করার পরে সাধারণত ৮-১০ বছরের আগে শেষ হয় না। এটা চলতে থাকে, চলতে থাকে। আমাদের এ বিষয়টিকে নজর দিতে হবে। আমরা যেভাবে এ প্রক্রিয়াগুলোতে এ মামলাগুলোর কার্যক্রম করি তা হওয়া উচিত নয়। একটা সিভিল মামলা নিষ্পত্তিতে এতো সময় লাগলে তা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব রাখে।

তিনি বলেন, আমি দেখেছি ইউরোপে মামলা করার সাথে সাথে বলে দেয়, দুই থেকে ছয়মাসের মধ্যে মামলাটি শেষ হবে। কবে কি করতে হবে তাও তখন বলে দেওয়া হয়। আমাদেরও তাই দরকার। আমাদের এখানে এমন কোনো ব্যবস্থা নাই, যা হতাশাজনক। আমাদের ব্যবস্থাপনায় অনেক ঘাটতি রয়েছে।

আজ শনিবার (০৩ এপ্রিল) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কান্ট্রি কমপ্রিটিটিভনেস অব বাংলাদেশ: কি রিফর্মস ইন ডুয়িং বিজনেস’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের আইনে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সবার এ নিয়ে কথা বলা দরকার। কেউ এভাবে বিষয়গুলো মেনে নিতে পারে না। ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক ভালো করছে। করোনাকালে তারা বেশ কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমরা যদি আমাদের সব সেবাগুলো ডিজিটাইলেশন করে আরও সহজে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো সফলতা আসবে। কিছু বিষয়ে সময়ের দরকার। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি।

‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আমাদের আয়ের ওপর আয়কর যে পরিমাণ রয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এখন অনেক লোক নিয়মিত আয়কর পরিশোধ করে যা সত্যি আনন্দের। গত তিনমাসে অনেক লোক প্রথমবারের মতো ট্রাক্স দিয়েছে। কক্সবাজারে আমরা বেশ কিছু প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হলে খুবই ভালো ফল আসবে। পোর্ট এলাকায়, বন্দর এলাকায় অনেক লোক কাজ পাচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু করে দেখিয়েছি। এরকম আরও বেশ কিছু বড় বড় কাজের পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের আছে। ডিজিটাইলাইজেশনের জন্য আমরা অনেক কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিকটাতে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন।’

সালমান এফ রহমান আরও বলেন, ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এনএসডিসি) দক্ষ লোক তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দক্ষ লোকের অনেক অভাব রয়েছে। অনেক লোক বছর বছর পড়াশোনা শেষ করে বের হন কিন্তু তারা চাকরি পান না। কারণ তারা ডিগ্রি নিয়ে বের হলেও দক্ষ হন না। তাই আমরা দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।

দোয়া পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. রিজওয়ান রাহমান। ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামির সত্তার।

ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের স্থান পাওয়া এক বড় অর্জন। তাছাড়া করোনায় আমরা যে ধরনের সফলতা দেখিয়েছি তা বিশ্ববাসীর কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ সফলতা এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে। আমরা দেশীয় এবং বৈশ্বিক অর্থায়ন সহায়তা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। কাজ চলছে ২০৪১ সালের মিশন-ভিশন অর্জনেরও।

ওয়েবিনারে ডেভিট ব্রো বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। আমরা আশাবাদী। কারণ বাংলাদেশ সঠিক নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সকলের জন্যই ভালো।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমরা বিশ্বের ১৪১টি দেশে আমাদের পণ্য পাঠাচ্ছি। আমরা দেখছি বাংলাদেশ দিনকে দিন রফতানিতে ভালো করছে। আমরা বর্তমানে বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব করতে পারি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ব্যবসায়ের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ভারত থেকে কিছু বিষয় দেখতে পারে। বর্ডারে পণ্য যাওয়ার জায়গাগুলোতে আরো ভালো করার জায়গা রয়েছে। করোনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আমাদের করণীয়, সামনের দুনিয়া সম্পর্কে ধারণা দিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নতি হচ্ছে। প্রাইভেট সেক্টরগুলোকেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে। আমাদের একসাথে কাজ করা দরকার। আয়োজকদের এমন একটি আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ। মুর্জিববর্ষে আমাদের চাওয়া ‘সোনার বাংলাদেশ’।

ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ, জীবন কৃষ্ণা সাহা রয়, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান, এন কে এ মোবিন প্রমুখ।

সেমিনারে আলোচকরা বলেন, জাপান, চীনসহ বেশ কিছু দেশের বিনিয়োগকারীদের পছন্দের জায়গা বাংলাদেশ। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিনিয়োগ দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অর্থসূচক/আরএ/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.