সাত মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৮৩ হাজার কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৯৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ প্রায় ৮৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্যে পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ২১৩ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৩ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। সে হিসাবে সাত মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ প্রায় ৮৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।

এ সময়ে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় তার আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ০২ শতাংশ কম করেছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে দশমিক ২৬ শতাংশ কমেছে। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের চাহিদা কম থাকায় আমদানিজনিত চাহিদাও কম ছিল। তাই আমদানি ব্যয় তেমন বাড়েনি। তবে দেশের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙা থাকায় বাণিজ্য ঘাটতিতে কম হয়েছে। প্রথম সাত মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।

বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়। করোনাকালীন মানুষ ভ্রমণ কম করেছে। অন্যদিকে আমদানি-রফতানি কম হওয়ায় বীমার খরচও কমে গেছে। ফলে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কম হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে এ খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে তা ছিল ১৮০ কোটি ডলার।

মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাব সরাসরি পড়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপরও। গত অর্থছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। একই সময়ে চলতি অর্থবছরের তা কমে ১৮১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ কমে ৫৩ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।

এদিকে করোনার মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা যখন নাজুক এমন পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্ত বাড়ছে। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনও ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে চলতি হিসাবে ২২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল প্রায় ১৮০ কোটি ডলার।

এদিকে সার্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) ৬৪০ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ; যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই সাত মাসে এক হাজার ৪৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ১০৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.